লোহা প্রকৃতিতে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় না। এটি আকরিক থেকে নিষ্কাশন করা হয়। লোহার প্রধান আকরিকগুলি হলো, হেমাটাইট (Hematite, Fe2O3), ম্যাগনেটাইট (Magnetite, Fe3O4), আয়রন পাইরাইটিস (Iron Pyrites, FeS2) ও সিডারাইট (Siderite,FeCO3), লিমোনাইট (Fe2O3. 3H2O)।
লোহা তৈরির প্রক্রিয়াটিকে সাধারণত চারটি ধাপে ভাগ করা যায়:
১. আকরিক পরিশোধন
প্রথমে আকরিক থেকে অন্যান্য অমেধ্য পদার্থ অপসারণ করা হয়। এটি সাধারণত ভাঙ্গচুর, চূর্ণকরণ, দ্রবণীয় পদার্থের পৃথককরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করা হয়।
২. গন্ধক অপসারণ
আকরিকে সাধারণত কিছু পরিমাণ গন্ধক থাকে। গন্ধক লোহার সাথে বিক্রিয়া করে কঠিন পদার্থ তৈরি করে, যা লোহার গুণমানকে কমিয়ে দেয়। তাই গন্ধক অপসারণ করা জরুরি। এটি সাধারণত কয়লা ব্যবহার করে বায়ু বা অক্সিজেনের উপস্থিতিতে উত্তাপের মাধ্যমে করা হয়।
৩. লোহা উৎপাদন
গন্ধক অপসারণের পর আকরিককে চুল্লিতে ঢেলে গলিয়ে ফেলা হয়। চুল্লিতে সাধারণত কয়লা বা প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হয়। কয়লা বা প্রাকৃতিক গ্যাসের জ্বালানী শক্তির মাধ্যমে আকরিকের ধাতুগুলিকে তরল অবস্থায় রূপান্তরিত করা হয়।
৪. লোহা পরিশোধন
তরল লোহা থেকে অতিরিক্ত কার্বন, সিলিকন, ম্যাঙ্গানিজ, সালফার ইত্যাদি অমেধ্য পদার্থ অপসারণ করা হয়। এটি সাধারণত বৈদ্যুতিক ফার্নেস, আনয়ন চুল্লি বা বেসিক অক্সিজেন চুল্লি ব্যবহার করে করা হয়।
এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপন্ন লোহাকে কাঁচা লোহা বা স্ক্র্যাপ বলা হয়। কাঁচা লোহা থেকে বিভিন্ন ধরনের ইস্পাত তৈরি করা হয়।
লোহা তৈরির প্রক্রিয়াটি উন্নত হওয়ার সাথে সাথে লোহার উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় ২ বিলিয়ন টন লোহা উৎপাদিত হচ্ছে।