জেনারেল মটরসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ম্যারি বারা থেকে শুরু করে অ্যাপলের সিইও টিম কু—সবাই সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার ওপর জোর দেন সব সময়। কিন্তু সকালে উঠলেও সময়টা কাজে লাগানোর মতো মানসিক অবস্থা থাকে না অনেকেরই। ক্লান্তি, ঘুম ঘুম ভাব ছাপিয়ে কীভাবে সকালটাকে কার্যকর করে তুলবেন?
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে উঠুন
শুরুতে টিম কুকের কথা বলছিলাম। টিম কুক কয়টায় ঘুম থেকে ওঠেন, জানেন? ভোর পৌনে চারটায়! প্রতিদিন। দেহঘড়িকে এই নিয়মের সঙ্গে মানিয়ে নিলে কিন্তু বেশ উপকার আছে। কাজ থাকুক বা না থাকুক, শরীরকে একটি রুটিনের ভেতরে আনার চেষ্টা করুন। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে উঠলে শরীরও আপনার রুটিন সম্পর্কে সজাগ হয়ে যাবে। এর ফলে ঘুম থেকে ওঠামাত্র বাড়তি ক্লান্তিবোধ হবে না।
এক গ্লাস পানি পান করুন
সকালে ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে এক গ্লাস পানি পান করা ভালো। এতে করে শরীরে পানিশূন্যতা থাকলে যেমন কেটে যায়, তেমনি হজমশক্তির জন্যও এটি উপকারী। পবিত্র রমজানে সাহ্রির সময় পানি খেয়ে নিতে পারেন।
হালকা ব্যায়াম করুন
সকাল শুরু করুন মৃদু ব্যায়াম দিয়ে। স্ট্রেচিং বা হালকা ব্যায়াম শরীরকে জাগ্রত করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া স্ট্রেচিং শরীরের রক্তপ্রবাহ ত্বরান্বিত করে।
স্বাস্থ্যকর প্রাতরাশ গ্রহণ করুন
রোজায় যদিও আমাদের রুটিন বদলে যায়। তবে অন্যান্য মাসে সকালের নাশতায় অবশ্যই স্বাস্থ্যকর কিছু খেতে চেষ্টা করুন। পুরো দিনের কার্যক্ষমতা নির্ভর করে দিনের প্রথম খাবারের ওপর। একটি ভালো ও সুষম প্রাতরাশ পুরো দিনের শক্তি সঞ্চয় করতে এবং কর্মক্ষম রাখতে সহায়তা করে।
দিনের পরিকল্পনাগুলোতে চোখ বুলিয়ে নিন
সকালবেলায়ই পুরো দিনের কার্যক্রমে একবার চোখ বুলিয়ে নিন। এতে করে পুরো দিনের কার্যক্রম সম্পর্কে যেমন একটি ধারণা হয়ে যাবে, তেমনি লক্ষ্যও নির্ধারিত হয়ে যাবে।
ঠান্ডা পানিতে গোসল করুন
ঠান্ডা পানিতে গোসল শরীরের রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তাই এটি শরীরের জন্য বেশ উপকারী। সকালবেলা ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে মনও ভালো থাকে।
সূত্রঃ- প্রথম আলো
আর সকালে ঘুম থেকে উঠেই এই ১২টি কাজ করবেন নাঃ-
১. সকালে ওঠার জন্য অ্যালার্ম দিলে কখনোই স্নুজ বাটন দিয়ে রাখবেন না। এতে একটু পরপর অ্যালার্ম বাজবে আর আপনি বারবার বন্ধ করে আবার ঘুমাবেন। এতে আপনার ঘুম পরিপূর্ণ হবে না।
২.ঘুম থেকে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই পা সোজা করে, হাত টানটান করে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকুন। এরপর উঠে বসুন। এতে সারা দিন আপনি বেশ সতেজ থাকবেন। আর যদি বিড়ালের মতো ভাঁজ হয়ে ঘুম থেকে ওঠেন, তাহলে সারা দিন আপনার ক্লান্ত লাগবে এবং ঘুম পাবে।
৩.ঘুম ভেঙেই ফোনে ই-মেইল বা মেসেজ দেখবেন না। এতে আপনার মস্তিষ্কের ওপর চাপ পরবে। আর খারাপ কোনো মেসেজ থাকলে পুরো দিনটাই খারাপ যাবে।
৪. ঘুম থেকে উঠে বিছানা অগোছালো অবস্থায় রেখে যাবেন না। চট করেই বিছানাটা গুছিয়ে ফেলুন। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় পরিষ্কার রুম দেখলে মনটা অনেক ফুরফুরে থাকবে।
৫. ঘুম থেকে উঠেই সবার আগে চা একদম নয়। রাতে খাবার পর দীর্ঘক্ষণ না খাওয়ার ফলে আমাদের শরীর অ্যাসিডিক হয়ে থাকে। ফলে দুধ-চিনি দেয়া চা বা কফি আমাদের শরীরকে আরও অ্যাসিডিক করে তোলে। তার বদলে বেশ খানিকটা পানি, লাইম জুস খেতে পারেন।
৬. ঘরে এমনভাবে আলোর ব্যবস্থা করবেন যেন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর অন্ধকার না থাকে। ঘুম ভেঙে অন্ধকার দেখলে দ্বিধায় ভুগবেন এবং প্রচণ্ড ঘুম পাবে। তাই প্রাকৃতিক আলো প্রবেশ করতে পারবে, এমনভাবে ঘর সাজান।
৭. ফিটনেস এক্সপার্টদের মতে, সকালে উঠে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ রেখে চুপ করে থাকুন। বেশ কয়েকটি ডিপ ব্রিথ (লম্বা শ্বাস) নিন। ঘরের উষ্ণতায় রাখা পানি পান করুন। তারপর কাজ শুরু করুন।
৮. ঘুম থেকে ওঠার পর আমাদের মাংসপেশী, বিশেষত মেরুদণ্ড একটু স্টিফ হয়ে থাকে। ফলে উঠে বসার আগে একটু স্ট্রেচ না করলে এই স্টিফনেস সারা দিন থাকতে পারে। তাই বিছানায় শোয়া অবস্থায় ৩-৪ বার একটু হাল্কা স্ট্রেচ করে তার পর উঠুন।
৯. ব্রেকফাস্ট না করার যদি অভ্যাস থাকে তো এখনই পাল্টে ফেলুন। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ব্রেকফাস্ট যারা করেন না তারা স্থুলতা, ডায়াবেটিক এবং অল্পতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। ঘুম থেকে উঠে ব্রেকফাস্ট করলে শরীর একেবারে চাঙ্গা থাকবে। কয়েকটি ভেজানো কাঠবাদাম, রুটি-তরকারি বা ফল ইত্যাদি খেতে পারেন।
১০. কোনো কারণে সকাল সকাল মেজাজ খারাপ হলেও নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করুন। অনেকের স্বভাব থাকে সকালে খুব বেশি আওয়াজে গান চালানোর। এটাও ত্যাগ করুন। সকালে উঠে পাখির ডাক শুনুন। কুরআন তিলাওয়াত করা বা শ্রবণ করা এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি উপকারী।
১১. অনেকে মনে করেন, সকাল সকাল এক কাপ কড়া কালো কফি খেলে চাঙ্গা হয়ে উঠবেন। কিন্তু, খালি পেটে ধূমপান বা কড়া কফি আপনার শরীরকে পুষ্টি থেকে কয়েক যোজন দূরে সরিয়ে দেবে। ফলে খালি পেটে আগে পানি খান।
১২. অনেকে ঘুম থেকে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে জিমে দৌড়ান, যা একেবারেই করা উচিৎ না।