সম্মান পাওয়ার ১৫ উপায়ঃ-
১. এমন কিছু করুন, যা সত্যিই মানুষের কাজে লাগে। স্টিভ জবস, বিল গেটস বা জ্যাক মা কি শুধুই তাঁদের অর্থ আর প্রতিপত্তির জন্য সম্মানিত? নিশ্চয়ই না! তারা এমন কিছু করেছেন যার কারণে বহু মানুষ উপকৃত হয়েছে। মানুষের জীবনকে তারা সহজ করেছেন। ইতিবাচক ভাবে পৃথিবীর চেহারা বদলে দিয়েছেন। তাদের জীবন ও কাজ মানুষকে অনুপ্রাণিত করে, সামনে এগিয়ে চলার উৎসাহ দেয়। তাঁরা অর্জনের পাশাপাশি বিলিয়েও দিয়েছেন। যা তাদের সম্মানিত মানুষ বানিয়েছে। বিলিওনেয়ার তো পৃথিবীতে বহু আছে। ড্রাগ ডিলার, দুর্নীতিবাজ, চোরাচালানী এরাও বহু টাকা আর ক্ষমতার মালিক। কাজেই, সত্যিকার সম্মান পেতে হলে মানুষের জন্য এমন কিছু করুন যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে তাদের সত্যিকার উপকারে লাগে।
২. কথা দিয়ে কথা রাখুন
মানুষের কাছে সম্মানিত হওয়ার প্রথম শর্তই হল কথা দিয়ে কথা রাখা। আপনি কারও জন্য কিছু করার প্রতিশ্রুতি দিলে অবশ্যই আপনাকে তা করতে হবে। যদি একান্তই না পারেন, তবে বিকল্প ব্যবস্থা করে দিতে হবে এবং আন্তরিক ভাবে ক্ষমা চাইতে হবে। আপনি যদি একজন মানুষের সাথে একবারের বেশি অথবা সবার সাথেই মাঝে মাঝে কথা দিয়ে কথা না রাখেন তবে আপনার প্রতি মানুষের বিশ্বাস ও সম্মান নষ্ট হয়ে যাবে। তাই কথা দেয়ার আগে ভালো করে ভেবে নিন, তা পালন করা আপনার পক্ষে সম্ভব কি না। যদি সম্ভব না হয়, তবে ভুলেও প্রতিশ্রুতি দেবেন না। আপনি না বলার কারণে মানুষটি যতটা কষ্ট পাবে। হ্যাঁ বলে তারপর কাজটি না করলে আরও বেশি কষ্ট পাবে। আর সম্মান তো নষ্ট হবেই।
৩. দোষ না করলে দুঃখিত বলবেন না
কিছু মানুষ আছেন, যারা ‘অতিরিক্ত ভালো’ নিজে দোষ না করলেও ‘শান্তি রক্ষা’ করার খাতিরে নিজের ঘাড়ে দোষ নেন। এটা আসলে দুর্বল মানসিকতার পরিচয়। এরা হয়তো ভাবেন যে, এটা করে মহত্বের পরিচয় দেয়া হল। কিন্তু এর ফলে মানুষের চোখে দুর্বল হয়ে যেতে হয়। মানুষের চোখে সম্মান কমে যায়। কাজেই, যে দোষ আপনি করেননি সেই দায় নিজের ঘাড়ে নেবেন না।
৪. ভুল করলে স্বীকার করুন এবং সংশোধন করুন
কিছু মানুষ যেমন ভুল না করেও নিজের ঘাড়ে দায় নেয় আবার কিছু মানুষ নিজের শত দোষ থাকলেও সেই দোষ স্বীকার করতে চায় না। পরিস্থিতি বা অন্য মানুষের ঘাড়ে দোষ চাপাতে চেষ্টা করে। যদি এই স্বভাব একবার অন্যরা খেয়াল করে তবে চিরদিনের জন্য তাদের কাছে সম্মান হারিয়ে যাবে। ভুল না করে দোষ স্বীকার করাটা যেমন দুর্বলতা, ভুল করার পর তা স্বীকার না করা আরও বড় দুর্বলতার পরিচয়। এই ধরনের মানুষকে কেউ বিশ্বাস করে না, এবং সম্মানও করে না।
৫. অন্যের সময় নষ্ট করবেন না
আপনি যখন অন্যের সময়ের মূল্য দেবেন, তখন অন্যরাও আপনার সময়ের মূল্য দেবে। কোনও এ্যাপয়েন্টমেন্ট থাকলে কখনওই দেরি করবেন না। প্রয়োজনে আগে আগে গিয়ে অপেক্ষা করুন। কারও সাথে কোনও কাজে গেলে ফালতু গল্পে সময় নষ্ট করবেন না, এবং কাউকে কাজে ব্যস্ত দেখলে তার সময় নষ্ট করবেন না। এটা আপনার ব্যক্তিত্বকে শক্তিশালী করবে, এবং মানুষ আপনার কথা ও কাজকে বেশি মূল্য দেবে। ব্যক্তিত্ববান মানুষকে সবাই সম্মান করে। ব্যক্তিত্ববান হওয়া মানে সব সময়ে গম্ভীর হয়ে থাকা নয়। ব্যক্তিত্ববান মানে কথার সাথে কাজের মিল থাকা, এবং অন্যের ও নিজের সময় মূল্যহীন কাজে নষ্ট না করা।
৬. না জেনে মন্তব্য করবেন না, প্রয়োজনে চুপ থাকুন
কোনও বিষয়ে যদি আপনি কম জানেন, বা না জানেন এতে লজ্জার কিছু নেই। মানুষও এতে কিছু মনে করে না। অন্য দশজন মানুষ তাদের কাজ বা পড়াশুনার বিষয়ে যা জানে আপনি আপনার বিষয়ে তাদের চেয়ে বেশি জানেন। কোনও বিষয়ে না জেনে মন্তব্য করা মানে নিজের যোগ্যতার ওপর আপনার যথেষ্ট সম্মান নেই। আর মানুষ যখন বুঝে যাবে যে আপনি না জেনেই কোনও বিষয়ে মন্তব্য করছেন তখন তাদের চোখে আপনি আরও ছোট হয়ে যাবেন। অন্যদিকে চুপ থাকলে তারা আপনার ব্যক্তিত্বকে সম্মান করবে। যে কোনও আলোচনায় সম্মান পাওয়ার সেরা উপায় হল, যা জানেন তা নিয়ে কথা বলুন; আর যা জানেন না সেই বিষয়ে চুপ থাকুন। না জানা বিষয়ে প্রশ্ন করলে, আপনার অজ্ঞানতার কথা অকপটে স্বীকার করুন। এটা আপনার সাহস আর আত্মবিশ্বাসকে প্রকাশ করবে। আপনি অন্যদের চোখে সম্মানিত হয়ে উঠবেন।
৭. অন্যের মতামতকে সম্মান দেখান
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের চিন্তাধারা আলাদা। প্রতিটি বিষয়কে প্রতিটি মানুষ তার নিজস্ব নজরে দেখে। একজনের সাথে আপনার মতের মিল না হলেই তাকে ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করবেন না। মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনুন। যুক্তিগুলো বোঝার চেষ্টা করুন। তারপর আপনার যুক্তি গুলো বলুন। ভুলেও ব্যক্তিগত খোঁচা দেবেন না বা মুখের ওপর তার জ্ঞানের স্বল্পতা নিয়ে তামাশা করবেন না। এটা মানুষকে দারুণ ভাবে অপমান করে। বিশেষ করে অনেকে মিলে আলোচনা করার সময়ে ভুলেও কাউকে ছোট করার চেষ্টা করবেন না।
৮. অহংকার করবেন না
আপনার অনেক কিছু থাকতে পারে। আপনি অনেক দক্ষ আর প্রতিভাবান মানুষ হতে পারেন। কিন্তু তার জন্য যদি আপনি অন্যদের ছোট করে দেখেন এবং অহংকার প্রকাশ করেন তবে কোনোদিন অন্যের কাছে সত্যিকার সম্মান পাবেন না। সম্মান নিজেকে যোগ্য মনে করা এবং নিজের যোগ্যতার ওপর বিশ্বাস থাকা দোষের কিছু নয়। কিন্তু সেটা নিয়ে বড়াই করা এবং অন্যদের ছোট করে দেখাটা অহংকার। অহংকার করা মানে আপনার ইগো আপনাকে শাসন করছে। ইগোকে কখনওই প্রশ্রয় দেবেন না।
৯. অতি বিনয় পরিহার করুন
যদি নিজের যোগ্যতার বিষয়ে অতিরিক্ত বিনয় দেখান এবং নিজে যা তার চেয়ে অনেক ছোট করে নিজেকে তুলে ধরেন তাহলেও মানুষ আপনাকে প্রাপ্য মূল্য ও সম্মান দেবে না। নিজের ব্যাপারে বড় বড় কথা যেমন বলবেন না তেমনি নিজেকে খুব ছোটও করবেন না। অহংকারের মত, অতি বিনয়ের কারণেও মানুষ আপনার সঠিক যোগ্যতা মাপতে পারে না। এর ফলে আপনি যোগ্যতা অনুযায়ী সম্মানও পাবেন না।
১০. সৎ থাকুন
একজন মানুষের সততা তার অন্যদের কাছ থেকে সম্মান পাওয়ার অন্যতম উপায়। আপনার ওপর কোনও দায়িত্ব থাকলে পূর্ণ সততার সাথে সেই দায়িত্ব পালন করুন। পদ বা দায়িত্ব অনুযায়ী আপনার কাজ যেমন হওয়া উচিৎ, ঠিক সেভাবেই দায়িত্ব পালন করুন তাহলেই আপনার পজিশন ও কাজে মিল থাকবে এবং অন্যরা আপনাকে আন্তরিক ভাবে সম্মান করবে।
১১. কথা ও কাজে মিল রাখুন
প্রতিটি ব্যাপারে আপনার চিন্তা ভাবনা পরিষ্কার থাকতে হবে এবং প্রতিটি কাজে সেই চিন্তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। যদি মুখে বলেন আপনি অন্যায় ভাবে নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করা পছন্দ করেন না তবে কাজেও যেন সেটা প্রকাশ পায়। কথা ও কাজে যদি মিল না থাকে তবে মানুষ আপনার প্রতি সম্মান হারিয়ে ফেলবে। সততার সাথে নিজের কথা গুলোকে বাস্তবে পরিণত করুন।
১২. সব সময়ে নিজের জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করুন
ক্যারিয়ার ও আর্থিক উন্নতির জন্য যেমন সব সময়ে নিজের জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়ানো প্রয়োজন, তেমনি অন্যের কাছ থেকে সম্মান আদায় করার জন্যও এটা জরুরী। আপনি যখন নিয়মিত নিজের জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়াবেন, তখন বিভিন্ন আলোচনা ও কাজকে ইতিবাচক ভাবে অনেক বেশি প্রভাবিত করতে পারবেন। নিজের কাজের ক্ষেত্রে এবং ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে যখন আপনি জ্ঞান ও দক্ষতার পরিচয় দেবেন, তখন এটা আপনার জন্য সম্মান পাওয়ার উপায় হিসেবে কাজ করবে। আপনার মতামত ও সিদ্ধান্তের ওপর মানুষের আস্থা বেড়ে যাবে, এবং তারা আপনাকে অনেক বেশি মূল্য দেবে।
১৩. ইতিবাচক থাকুন ও অন্যদের অনুপ্রাণিত করুন
নেতিবাচক ও হতাশ লোকদের কাছে কেউই থাকতে চায় না এবং এদের কেউ সম্মানও করে না। জীবনে যত কঠিন সময়ই আসুক না কেন সব সময়ে আশাবাদী ও ইতিবাচক থাকুন। অন্য মানুষ যখন আপনার সামনে হতাশার কথা বলে তাদের আশার বানী শোনান। নিরুৎসাহিত করার বদলে অনুপ্রেরণা দিন। এটা করলে অন্যরা আপনার কাছে এসে তাদের নিজেদের ব্যাপারে ভালো বোধ করবে এবং তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
১৪. আবেগের বদলে যুক্তি দিয়ে সিদ্ধান্ত নিন
যারা নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না তারা আসলে মারাত্মক দুর্বল মনের মানুষ। নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ করতে পারা একজন মানুষের সাফল্য ও সম্মান পাওয়ার সবচেয়ে বড় গুণাবলীর একটি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবেগীয় সিদ্ধান্ত ভালো হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আবেগ দিয়ে নেয়া সিদ্ধান্ত খারাপ ফলই বয়ে আনে। আপনজনের প্রতি ভালোবাসা একটি অতি শক্তিশালী আবেগ। এই আবেগ না থাকলে তাকে মানুষই বলা যাবে না। কিন্তু আবেগকে প্রশ্রয় দিতে গিয়ে যদি নিজের সন্তানের বা স্নেহের পাত্রের অন্যায়গুলোকে প্রশ্রয় দেন তবে একটা সময়ে গিয়ে তারাই আপনাকে অসম্মান করবে। সমাজেও আপনি সম্মান হারাবেন।
১৫. সব সময়ে সত্যি কথা বলুন এবং সাহস প্রকাশ করুন
নিজের ব্যাপারে বা অন্য অনেক ব্যাপারে মিথ্যা বলে হয়তো আপনি অন্যদের সম্মান পাবেন তবে আপনিও জানেন সেই সম্মান আসলে আপনার প্রাপ্য নয়। এবং সত্য এক সময়ে না এক সময়ে প্রকাশ হবেই। আজ পর্যন্ত কেউই সত্যকে গোপন করে রাখতে পারে নি। মিথ্যা দিয়ে আদায় করা সম্মান সত্য প্রকাশের সাথে সাথে ঘৃণায় পরিণত হয়। মানুষ আপনার দিকে ফিরেও তাকাবে না। ‘চাপাবাজ’ মানুষকে কেউই সম্মান করে না।
সংগৃহীত।