ইতিহাসে বিশেষভাবে মোট নয়টি প্রধান ক্রুসেড যুদ্ধকেই ক্রসেড যুদ্ধ বলা হয়। এগুলো সংঘটিত হয় ১০৯৬ থেকে ১২৭২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় ২০০ বছর জুড়ে।।প্রধান এই ক্রুসেডসমূহ হলোঃ-
1. প্রথম ক্রুসেড (১০৯৬–১০৯৯)
2. দ্বিতীয় ক্রুসেড (১১৪৭–১১৪৯)
3. তৃতীয় ক্রুসেড – সালাহউদ্দীন বনাম রিচার্ড (১১৮৯–১১৯২)
4. চতুর্থ ক্রুসেড (১২০২–১২০৪) – মূল লক্ষ্য জেরুজালেম হলেও আক্রমণ হয় কনস্টান্টিনোপলে
5. পঞ্চম ক্রুসেড (১২১৭–১২২১)
6. ষষ্ঠ ক্রুসেড (১২২৮–১২২৯) সমঝোতার মাধ্যমে জেরুজালেম দখল
7. সপ্তম ক্রুসেড (১২৪৮–১২৫৪)
8. অষ্টম ক্রুসেড (১২৭০)
9. নবম ক্রুসেড (১২৭১–১২৭২) শেষ বড় ক্রুসেড যুদ্ধ। এছাড়া আরো কিছু ক্ষুদ্র আঞ্চলিক “ক্রুসেড” ছিল, তবে ইতিহাসে উপরের নয়টি যুদ্ধকেই সাধারণত ক্রুসেড যুদ্ধ বলা হয়।
সময়কাল হিসেবে এই যুদ্ধগুলোর একটিও ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগের নয়, বরং আরও অনেক পরের। এ হিসেবে বলাই যেতে পারে যে ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে কোন ক্রুসেড যুদ্ধ সংঘটিত হয় নি।
কিন্তু আমরা যদি "ক্রুসেড যুদ্ধ মূলত কোন্ যুদ্ধগুলোকে বলে এবং এ যুদ্ধগুলোর প্রধান লক্ষ্য কী ছিল" এদিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই যে, মূলত (ইউরোপীয় খ্রিস্টানদের পক্ষ থেকে মধ্যযুগে) মুসলমানদের বিরুদ্ধে পরিচালিত ধারাবাহিক সামরিক অভিযানের নামই ক্রুসেড যুদ্ধ। আর এ যুদ্ধগুলোর প্রধান লক্ষ্য ছিল -
১. জেরুজালেমসহ পবিত্র ভূমি (Holy Land) মুসলমানদের হাত থেকে দখল করা।
২. পূর্ব অর্থোডক্স খ্রিস্টানদের সহায়তা করা। এবং
৩. খ্রিস্টধর্মের প্রভাব বিস্তার করা।
আর “Crusade” শব্দটি এসেছে “Cross” (ক্রস) থেকে; কারণ, খৃস্টান যোদ্ধাদের প্রতীক ছিল ক্রসচিহ্ন।
যদিও প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রথমটি ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে খৃষ্টানদের অলরেডি অর্জিত ছিলো, আর তা হচ্ছে "বায়তুল মুকাদ্দাস নিজেদের দখলে থাকা।" কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃতীয় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে একত্রে করলে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, খৃস্টানদের পারস্পরিক সহায়তা বৃদ্ধি ও খৃস্টধর্মের প্রভাব বিস্তার করা। এ হিসেবে ইসলামের প্রাথমিক যুগ তথা হজরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে মুসলিম ও খৃষ্টানদের মাঝে সংঘটিত যুদ্ধগুলোকেও আমরা "ক্রুসেড যুদ্ধ" হিসেবে নামকরণ করতে পারি। আর এ যুগে খৃষ্টানদের সাথে মুসলমানদের হওয়া দু'টি যুদ্ধের একটি যুদ্ধ হচ্ছে "মুতার যুদ্ধ", আর আরেকটি যুদ্ধ হচ্ছে "তাবুকের যুদ্ধ"। মুতার যুদ্ধে হজরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অংশগ্রহণ করেন নি। তবে তাবুক যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। আর তাবুক যুদ্ধ ছিলো নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনের শেষ যুদ্ধ।
সুতরাং লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনুসারে "মুতার যুদ্ধ" ও "তাবুক যুদ্ধ"কেও " ক্রুসেড যুদ্ধ" বলা যায়।
অতএব নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনের শেষ যুদ্ধ "তাবুক যুদ্ধই" হচ্ছে সেই ক্রুসেড যুদ্ধ, যে ক্রুসেড যুদ্ধে ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজেই অংশগ্রহণ করেছিলেন।