সুলতান সুলেমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট (Suleiman the Magnificent) কর্তৃক তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র শাহজাদা মুস্তফাকে (Şehzade Mustafa) মৃত্যুদণ্ডের ঘটনা ইতিহাসের অতি গুরুত্বপূর্ণ ও করুণ এক ঐতিহাসিক ঘটনা, এটি ঘটে আনুমানিক ১৫৫৩ খ্রিষ্টাব্দে, সুলতান সুলেমানের রাজত্বকালে।
ঘটনার পেছনের কারণগুলো ছিল রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, উত্তরাধিকার নিয়ে ভয়, এবং হুররাম সুলতান ও রুস্তম পাশার প্রভাব।
♦️ পটভূমি
সুলতান সুলেমানের বহু পুত্রের মধ্যে শাহজাদা মুস্তফা ছিলেন সবচেয়ে যোগ্য, জনপ্রিয় ও সেনাবাহিনীর প্রিয়।
তিনি ছিলেন সুলেমানের প্রথম স্ত্রী মাহিদেভরান সুলতানের (Mahidevran Sultan) সন্তান। মুস্তফা বীর, ন্যায়পরায়ণ এবং প্রশাসনিক দক্ষতায় অসাধারণ ছিলেন, ফলে প্রজারা ও সৈন্যরা তাঁকে ভবিষ্যৎ সুলতান হিসেবে দেখতে চেয়েছিল।
♦️ ষড়যন্ত্রের সূত্র
কিন্তু পরবর্তীতে সুলেমান হুররাম সুলতানের (Hürrem Sultan) প্রেমে পড়েন এবং তাঁর সন্তানদের (বিশেষত সেলিম ও বায়েজিদকে) সিংহাসনের উত্তরাধিকার দিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
হুররাম সুলতান ও তাঁর জামাতা রুস্তম পাশা, যারা রাজনৈতিকভাবে প্রবল প্রভাবশালী ছিলেন, শাহজাদা মুস্তফার জনপ্রিয়তাকে নিজেদের জন্য বিপদ হিসেবে দেখেন।
তারা সুলতানের কানে লাগান যে—
★ “শাহজাদা মুস্তফা নাকি সেনাবাহিনীর সমর্থন নিয়ে পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ষড়যন্ত্র করছে।”
♦️ মৃত্যুদণ্ডের ঘটনা
১৫৫৩ সালে সুলেমান পারস্য অভিযান (Safavid campaign) চলাকালে কনিয়া (Konya)-র কাছে তাঁবুতে অবস্থান করছিলেন। সেখানে শাহজাদা মুস্তফা তাঁকে দেখতে গেলে, আগে থেকেই সাজানো নাটকের অংশ হিসেবে তাঁকে বিদ্রোহী হিসেবে অভিযুক্ত করে তাঁবুর ভেতরেই গলা টিপে হত্যা করা হয় (সুলতানের আদেশে, “বোহদান” নামক দাসেরা এই কাজটি সম্পন্ন করে)।
ঘটনাস্থলে সুলতান নিজেও উপস্থিত ছিলেন। শাহজাদা মুস্তফার মৃত্যুতে সেনাবাহিনী ও সাধারণ প্রজাদের মধ্যে গভীর শোক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
♦️ পরিণাম
এই ঘটনার পর সুলতান সুলেমানের জনপ্রিয়তা আঘাতপ্রাপ্ত হয়। পরে তিনি বুঝতে পারেন, এটি হয়তো ষড়যন্ত্র ছিল। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। শাহজাদা মুস্তফার মৃত্যুর পর হুররাম সুলতানের সন্তানদের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু হয়, যা শেষে সেলিম দ্বিতীয় (Selim II)-এর সুলতান হওয়ায় গিয়ে শেষ হয়।