সূরা আত-তাওবা (التوبة)-এর শেষ দুই আয়াতকে ইসলামী দুনিয়ায় অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ও শক্তিশালী আয়াত হিসেবে গণ্য করা হয়।
♦️ সূরা আত-তাওবার শেষ দুই আয়াত
لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ (١٢٨)
فَإِن تَوَلَّوْا فَقُلْ حَسْبِيَ اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ (١٢٩)
(সূরা তওবা, আয়াত ১২৮–১২৯)
♦️ বাংলা অনুবাদঃ-
“তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের কাছে এক রাসূল আগমন করেছেন; তোমাদের কষ্ট তাঁর পক্ষে কঠিন, তিনি তোমাদের কল্যাণে আগ্রহী, মুমিনদের প্রতি দয়ালু ও দয়াময়।” (আয়াত ১২৮)
“অতঃপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে বলো — ‘আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট; তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই; তাঁরই উপর আমি ভরসা রাখি, এবং তিনি মহান আরশের অধিপতি।” (আয়াত ১২৯)
♦️ ফজিলত ও গুরুত্ব -
১. নবী ﷺ এর প্রতি গভীর ভালোবাসা প্রকাশ করে
এই আয়াতে নবী করিম ﷺ-এর দয়া, মমতা, ও উম্মতের প্রতি অগাধ ভালোবাসা ফুটে উঠেছে। আলেমগণ বলেন, এই আয়াত পাঠ করলে আল্লাহ ও রাসুল ﷺ-এর ভালোবাসা হৃদয়ে দৃঢ় হয়।
২. দুঃখ-কষ্ট ও বিপদে আশ্রয় হিসেবে পড়া উত্তম
রাসূল ﷺ বলেছেন -
“যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় এই দুই আয়াত পাঠ করবে, আল্লাহ তাকে যথেষ্ট করবেন।” (তাফসিরে ইবনে কাসিরে বর্ণিত) অর্থাৎ, ভয়, দুশ্চিন্তা, শত্রুর ভয় বা জীবনের অনিশ্চয়তায় এ দুই আয়াত শক্তি ও প্রশান্তি দেয়।
৩. নবী ﷺ নিজে এই আয়াতগুলোকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন
হাদীসে এসেছে, নবী ﷺ এই আয়াতগুলো পাঠ করে দোয়া করতেন এবং তাঁর সাহাবিদেরও পাঠ করতে উৎসাহ দিতেন।
৪. আল্লাহর উপর ভরসা শেখায়
শেষ আয়াতে বলা হয়েছে -
فَإِن تَوَلَّوْا فَقُلْ حَسْبِيَ اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ
এটি এক অসাধারণ তাওয়াক্কুল (আল্লাহর উপর নির্ভর) প্রকাশ। যে ব্যক্তি এই দোয়া বিশ্বাসের সঙ্গে পড়ে, স্বয়ং আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান।
♦️ ইহকাল ও পরকালের সার্বিক কল্যাণ -
হযরত আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে - যে ব্যক্তি (বিশেষ করে) সূরা তওবার শেষ আয়াতটি প্রতিদিন একশতবার পাঠ করবে -
★ তার ইহকাল ও পরকালের সর্বপ্রকার কল্যাণ সাধিত হবে এবং
★ হৃদয়ের সব নেক ইচ্ছা পূর্ণ হবে।
অন্য এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, এই আয়াতের (বিশেষ করে) সূরা তওবার শেষ আয়াতটির আমলকারী ব্যক্তি -
★ পানিতে ডুবে যাওয়া,
★ আগুনে পুড়ে যাওয়া,
★ অস্ত্রের আঘাত বা দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করা থেকে ইংশা আল্লাহ্ নিরাপদ থাকবে।
♦️ এ বিষয়ে হযরত লাইস ইবনে সা‘আদ একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন -
একবার এক ব্যক্তির পায়ের হাড় ভেঙে গিয়েছিল। এক রাতে তিনি স্বপ্নে দেখলেন, এক আগন্তুক এসে তাকে বলছে, “তুমি তোমার ভাঙা স্থানে হাত রেখে নিচের আয়াতটি পাঠ করো।” ঘুম থেকে জেগে তিনি স্বপ্নের নির্দেশ অনুযায়ী আয়াতটি পাঠ করলে, আল্লাহর কৃপায় তার পা সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়।
★ এই আয়াতের বিশেষ ফজিলত সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে, যদি কেউ আয়াতটি লিখে নিজের সঙ্গে রাখে এবং কোনো রাজা, শাসক বা মনিবের কাছে কোনো প্রয়োজনীয় কাজে যায়, তবে আল্লাহর হুকুমে সেই কাজ সহজেই সম্পন্ন হয়। সুবহানাল্লাহ্।
♦️ আয়াতটি এই -
فَإِن تَوَلَّوْا فَقُلْ حَسْبِيَ اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ
এটি সূরা তাওবার শেষ আয়াত।