মামলুক সাম্রাজ্য (الدولة المملوكية) সম্পর্কে বিস্তারিত ও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হলো -
(১) “মামলুক” (مملوك) শব্দের অর্থ হলো "ক্রীতদাস" বা "দাস সৈনিক"। তারা তুর্কি ও ককেশীয় অঞ্চলের দাসসৈন্য ছিল, যাদেরকে বিভিন্ন ইসলামী শাসকেরা কিনে এনে সেনাবাহিনীতে প্রশিক্ষণ দিতেন। পরবর্তীতে এই দাসসৈন্যরাই ক্ষমতা দখল করে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। তাই তাদের রাষ্ট্রের নাম হয় “মামলুক সাম্রাজ্য”, অর্থাৎ “দাস শাসিত সাম্রাজ্য”।
(২) মামলুক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সুলতান ইজ্জুদ্দীন আইবেক (الملك المعز عز الدين أيبك)
(৩) মামলুক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয় ১২৫০ খ্রিষ্টাব্দে, (হিজরি ৬৪৮ সালে)। এই সাম্রাজ্য মিশরে প্রতিষ্ঠিত হয়, আর এই সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল মিশরের বিখ্যাত কায়রো (القاهرة)।
(৪) মামলুক সাম্রাজ্য মোট ৪৭ জন সুলতান শাসন করেন। (১২৫০ খ্রিঃ – ১৫১৭ খ্রিঃ পর্যন্ত)
♦️ মামলুক সাম্রাজ্য দুটি প্রধান শাখায় বিভক্ত ছিল -
★ ক. বাহরী মামলুক যুগ (১২৫০ – ১৩৮২ খ্রিঃ)
(প্রধানত তুর্কি বংশোদ্ভূত সুলতান)
★ খ. বুরজী মামলুক যুগ (১৩৮২ – ১৫১৭ খ্রিঃ)
(প্রধানত সার্কেশীয় বা ককেশীয় বংশোদ্ভূত সুলতান)
(৫) মামলুক সাম্রাজ্যের সুলতানদের পূর্ণ তালিকা (১২৫০–১৫১৭ খ্রি.)
♦️ বাহরী মামলুক যুগ (১২৫০–১৩৮২ খ্রি.)
১. সুলতানা শাজারাত আদ-দুর ১২৫০ (খ্রি.) শাসনকাল - প্রায় ৩ মাস
২. ইযউদ্দিন আইবেক ১২৫০–১২৫৭ (খ্রি.) শাসনকাল - ৭ বছর
৩. আল-মানসুর আলী ১২৫৭–১২৫৯ (খ্রি.) শাসনকাল - ২ বছর
৪. সাইফুদ্দিন কুতুজ ১২৫৯–১২৬০ (খ্রি.) শাসনকাল - ১ বছর
৫. আল-জাহির বেইবার্স ১২৬০–১২৭৭ (খ্রি.) শাসনকাল - ১৭ বছর
৬. আল-সাইদ বারকা খান ১২৭৭–১২৭৯ (খ্রি.) শাসনকাল - ২ বছর
৭. আল-আদিল বদরুদ্দিন সুলামিশ ১২৭৯ (খ্রি.) শাসনকাল - প্রায় ৩ মাস।
৮. আল-মানসুর কালাউন ১২৭৯–১২৯০ (খ্রি.) শাসনকাল - ১১ বছর
৯. আল-আশরাফ খলিল ১২৯০–১২৯৩ (খ্রি.) শাসনকাল - ৩ বছর
১০. আন-নাসির মুহাম্মদ (প্রথমবার) ১২৯৩–১২৯৪ (খ্রি.) শাসনকাল - ১ বছর
১১. আল-আদিল কিতবোগা ১২৯৪–১২৯৬ (খ্রি.) শাসনকাল - ২ বছর
১২. আল-মানসুর লাজিন ১২৯৬–১২৯৯ (খ্রি.) শাসনকাল - ৩ বছর
১৩. আন-নাসির মুহাম্মদ (দ্বিতীয়বার) ১২৯৯–১৩০৯ (খ্রি.) শাসনকাল - ১০ বছর
১৪. বাইবার্স (দ্বিতীয়) ১৩০৯–১৩১০ (খ্রি.) শাসনকাল - প্রায় ১ বছর
১৫. আন-নাসির মুহাম্মদ (তৃতীয়বার) ১৩১০–১৩৪১ (খ্রি.) শাসনকাল - ৩১ বছর
১৬. আল-মানসুর আবু বকর ১৩৪১ (খ্রি.) শাসনকাল - প্রায় ২ মাস
১৭. আল-আশরাফ কুজখমার ১৩৪১–১৩৪২ (খ্রি.) শাসনকাল - প্রায় ৭ মাস
১৮. আন-নাসির আহমদ ১৩৪২ (খ্রি.) শাসনকাল - প্রায় ১ বছর
১৯. আস-সালিহ ইসমাইল ১৩৪২–১৩৪৫ (খ্রি.) শাসনকাল - ৩ বছর
২০. আল-কামিল শাবান ১৩৪৫–১৩৪৬ (খ্রি.) শাসনকাল - ১ বছর
২১. আন-নাসির হাসান (প্রথমবার) ১৩৪৭–১৩৫১ (খ্রি.) শাসনকাল - ৪ বছর
২২. আস-সালিহ সালাহুদ্দিন ১৩৫১–১৩৫৪ (খ্রি.) শাসনকাল - ৩ বছর
২৩. আন-নাসির হাসান (দ্বিতীয়বার) ১৩৫৪–১৩৬১ (খ্রি.) শাসনকাল - ৭ বছর
২৪. আল-মানসুর মুহাম্মদ ১৩৬১–১৩৬৩ (খ্রি.) শাসনকাল - ২ বছর
২৫. আল-আশরাফ শাবান ১৩৬৩–১৩৭৭ (খ্রি.) শাসনকাল - ১৪ বছর
২৬. আল-মানসুর আলী ১৩৭৭–১৩৮১ (খ্রি.) শাসনকাল - ৪ বছর
২৭. আস-সালিহ হাজ্জি (প্রথমবার) ১৩৮১–১৩৮২ (খ্রি.) শাসনকাল - প্রায় ১ বছর
♦️বুরজী মামলুক যুগ (১৩৮২–১৫১৭ খ্রি.)
২৮ আজ-জাহির বারকুক (প্রথমবার) ১৩৮২–১৩৮৯ (খ্রি.) শাসনকাল - ৭ বছর
২৯. আস-সালিহ হাজ্জি (দ্বিতীয়বার) ১৩৮৯–১৩৯০ (খ্রি.) শাসনকাল - ১ বছর
৩০. আজ-জাহির বারকুক (দ্বিতীয়বার) ১৩৯০–১৩৯৯ (খ্রি.) শাসনকাল - ৯ বছর
৩১. আন-নাসির ফারাজ ১৩৯৯–১৪১২ (খ্রি.) শাসনকাল - ১৩ বছর
৩২. আল-মুজাহিদ শায়খ ১৪১২–১৪২১ (খ্রি.) শাসনকাল - ৯ বছর
৩৩. আল-মানসুর আহমদ ১৪২১ (খ্রি.) শাসনকাল - প্রায় ১ বছর
৩৪. আজ-জাহির তাতার ১৪২১–১৪২২ (খ্রি.) শাসনকাল - ১ বছর
৩৫. আল-আশরাফ বারসবাই ১৪২২–১৪৩৮ (খ্রি.) শাসনকাল - ১৬ বছর
৩৬. আজ-জাহির জাকমাক ১৪৩৮–১৪৫৩ (খ্রি.) শাসনকাল - ১৫ বছর
৩৭. আল-মানসুর উসমান ১৪৫৩ (খ্রি.) শাসনকাল - কয়েক মাস
৩৮. আল-আশরাফ ইনাল ১৪৫৩–১৪৬১ (খ্রি.) শাসনকাল - ৮ বছর
৩৯. আল-মুয়াইয়্যদ আহমদ ১৪৬১ (খ্রি.) শাসনকাল - কয়েক মাস
৪০. খুশকদম ১৪৬১–১৪৬৭ (খ্রি.) শাসনকাল - ৬ বছর
৪১. আজ-জাহির বেইবার্স (তৃতীয়) ১৪৬৭–১৪৬৮ (খ্রি.) শাসনকাল - প্রায় ১ বছর
৪২. আল-আশরাফ কৈতবায় ১৪৬৮–১৪৯৬ (খ্রি.) শাসনকাল - ২৮ বছর
৪৩. আন-নাসির মুহাম্মদ ১৪৯৬–১৪৯৮ (খ্রি.) শাসনকাল - ২ বছর
৪৪. আল-আশরাফ জানবিলাত ১৪৯৮–১৫০০ (খ্রি.) শাসনকাল - ২ বছর
৪৫. আল-আদিল তুমানবায় (প্রথম) ১৫০১ (খ্রি.) শাসনকাল - কয়েক মাস
৪৬. আল-আশরাফ কনসুহ আল-গৌরি ১৫০১–১৫১৬ (খ্রি.) শাসনকাল - ১৫ বছর
৪৭. আল-আশরাফ তুমানবায় (দ্বিতীয়) ১৫১৬–১৫১৭ (খ্রি.) শাসনকাল - ১ বছর।
(৬) মামলুক সাম্রাজ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও দীর্ঘকালব্যাপী শাসনকারী সুলতান ছিলেন সুলতান আন-নাসির মুহাম্মদ ইবন কালাউন (الناصر محمد بن قلاوون) তিনি মামলুক সাম্রাজ্যের সর্বাধিক খ্যাতনামা ও প্রভাবশালী সুলতান, যিনি তিনবার ক্ষমতায় আসেন।
⚔️ তাঁর তিন দফা শাসনকাল পর্যবেক্ষণ -
★ ১ম বার খৃষ্টাব্দ ১২৯৩ থেকে ১২৯৪ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত মাত্র ১ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। কেননা, তখন তিনি অল্প বয়সে সিংহাসনে বসেন, যার কারণে প্রকৃত ক্ষমতা ছিলো আমিরদের হাতে, তাঁর কর্তৃত্বে কোনোকিছু ছিল না।
★ ২য় বার ক্ষমতায় ছিলেন খৃষ্টাব্দ ১২৯৯ সন থেকে ১৩০৯ সন পর্যন্ত মোট ১০ বছর। এবার তিনি রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আবার ক্ষমতা হারান।
★ ৩য় বার - এবার তিনি পূর্ণ ক্ষমতা নিয়ে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। খৃস্টাব্দ সন ১৩১০ থেকে ১৩৪১ পর্যন্ত মোট ৩১ বছর পূর্ণ ক্ষমতা নিয়ে তিনি শাসন করেন। আর এটিই ছিলো সুলতান আন-নাসির মুহাম্মদ ইবন কালাউন এর প্রকৃত স্বর্ণযুগ।
★ সুতরাং তাঁর মোট শাসনকাল দাঁড়ায় -
১ + ১০ + ৩১ = মোট ৪২ বছর। অতএব, তাঁর মোট শাসনকাল ৪২ বছর, যা মামলুক সাম্রাজ্যের সর্বাধিক দীর্ঘকালব্যাপী শাসনকাল।
তবে ইতিহাসবিদদের মধ্যে প্রচলিত একটি ধারা আছে যে, কোনো রাজা-বাদশাহের শাসনকাল যদি বিভিন্ন কারণে ব্যহত হয়, তখন “প্রকৃত স্বশাসনকাল” ধরা হয় যখন তিনি পূর্ণ স্বাধীনভাবে ক্ষমতা পরিচালনা করেন সেই সময়টাকে, সে হিসেবে সাধারণত সুলতান আন-নাসির মুহাম্মদ ইবন কালাউন এর তৃতীয় পর্যায়ের (১৩১০–১৩৪১) সময়টিই মূল শাসনকাল ধরা হবে। কেননা, প্রথম দুটি শাসনকালে তাঁর বয়স ছিল অল্প এবং তিনি ছিলেন অনভিজ্ঞ (শিশু ও কিশোর বয়স হওয়ার কারণে), আর এ সময় প্রকৃত ক্ষমতা দখল করেছিলেন সেনাপতি ও আমিরগণ।
তাই ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত তালিকায় প্রায়শই শুধু “৩১ বছর” (তাঁর প্রকৃত কার্যকর শাসনকাল) উল্লেখ করা হয়। কিন্তু মোট সময় ধরলে তিনি আসলে ৪২ বছর সুলতান ছিলেন।
♦️ সুলতান আন-নাসির মুহাম্মদ ইবন কালাউন (الناصر محمد بن قلاوون)-এর শাসনামলের পূর্ণাঙ্গ কৃতিত্ব ও অবদানসমূহ -
সুলতান আন-নাসির মুহাম্মদ ইবন কালাউনের শাসনকাল (১২৯৩ – ১৩৪১ খ্রিঃ) -
★ মামলুক সাম্রাজ্যের “স্বর্ণযুগ” তাঁরই শাসনামলে সূচিত হয়।
★ তিনি তিনবার ক্ষমতায় আসেন এবং মোট ৪২ বছর সুলতান ছিলেন।
ক. রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কৃতিত্ব -
★ ক্ষমতার পুনর্গঠন - তিনি কিশোর বয়সে দুইবার ক্ষমতা হারানোর পর তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসে আমির ও সেনাপতিদের দমন করে সুলতানের পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন।
★ ন্যায়বিচার ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা - প্রশাসনে ঘুষ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেন। স্বয়ং তিনি নিজে অভিযোগকারীর অভিযোগ শুনতেন।
★ প্রশাসনিক সংস্কার রাজস্ব ও কর ব্যবস্থা পুনর্গঠন করেন; কৃষিজমি পরিমাপ ও কর নির্ধারণের জন্য নতুন নীতিমালা চালু করেন।
★ রাজধানী কায়রোর পুনর্গঠন - কায়রোকে মধ্যযুগের অন্যতম সুন্দর নগরীতে রূপান্তরিত করেন, নতুন নতুন প্রাসাদ, দুর্গ ও রাস্তা নির্মাণ করেন।
খ. সামরিক ও পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক কৃতিত্ব ⚔
⚔️ সেনাবাহিনীর পুনর্গঠন - মামলুক সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী ও সংগঠিত করেন, নতুন সৈন্য নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু করেন।
★ সীমান্ত রক্ষা - সিরিয়া, ফিলিস্তিন ও আনাতোলিয়ার সীমান্তে দুর্গ ও ঘাঁটি নির্মাণ করে ক্রুসেডারদের আক্রমণ প্রতিহত করেন।
★ বিদেশনীতি - মঙ্গোল, ইলখান ও বাইজান্টাইনদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন; ইলখানদের সঙ্গে যুদ্ধ শেষে শান্তিচুক্তি করেন।
★ হজযাত্রার নিরাপত্তা - হজযাত্রীদের জন্য বিশেষ সেনা পাহারা ব্যবস্থা চালু করেন, যাতে মরুভূমিতে ডাকাতদের আক্রমণ না হয়।
গ.অর্থনৈতিক কৃতিত্ব
★ অর্থনীতি স্থিতিশীল করা - তিনি রাজকোষে সোনা ও রৌপ্য মজুত করেন, মুদ্রার মান স্থিতিশীল রাখেন।
★ কৃষি উন্নয়ন - নীলনদের তীরবর্তী এলাকায় সেচব্যবস্থা উন্নত করেন, ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধি পায়।
★ বাণিজ্য সম্প্রসারণ - ভারত, চীন, ইয়েমেন, ও ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন করেন।
★ বন্দর উন্নয়ন - আলেকজান্দ্রিয়া ও রাশিদ বন্দরে নতুন গুদাম, জাহাজ নির্মাণ কেন্দ্র ও বাণিজ্য অফিস স্থাপন করেন।
ঘ. ধর্মীয়, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কৃতিত্ব
★ মসজিদ ও মাদরাসা নির্মাণ - কায়রোতে বিখ্যাত “মসজিদ আন-নাসির মুহাম্মদ” নির্মাণ করেন (দুর্গের অভ্যন্তরে); বহু মাদরাসা ও খানকা স্থাপন করেন।
★ শিক্ষা বিস্তার - ফিকহ, হাদীস ও আরবি সাহিত্য অধ্যয়নের জন্য পণ্ডিতদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন, মাদরাসায় বৃত্তি প্রদান করেন।
★ স্থাপত্য ও শিল্পকলায় অবদান - মামলুক স্থাপত্যে গম্বুজ, খিলান ও জটিল খোদাইশিল্পের উৎকর্ষ ঘটে, মসজিদ ও মিনারের অলংকরণে নতুন ধারা প্রবর্তন করেন।
★ সংস্কৃতি ও সাহিত্য - আরবি ভাষা, ইতিহাস, ভূগোল ও ক্যালিগ্রাফি বিকাশে পৃষ্ঠপোষকতা দেন। তাঁর দরবার ছিল জ্ঞানী ও শিল্পীদের কেন্দ্র।
ঙ. সামাজিক ও ধর্মীয় উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ
★ দরিদ্র ও এতিমদের সহায়তা - “বাইতুল মাল” (রাষ্ট্রীয় তহবিল) থেকে নিয়মিত সাহায্য প্রদান করতেন।
★ ধর্মীয় ঐক্য - চারটি মাজহাবের (হানাফি, মালিকি, শাফেয়ি, হাম্বলি) ক্বাজি নিয়োগ দেন, যাতে বিচারব্যবস্থা ভারসাম্যপূর্ণ হয়।
★ সাধারণ জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক - জনগণের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করতেন, দরবারে অভিযোগ শোনার প্রথা চালু করেন।
চ. ঐতিহাসিক গুরুত্ব
★ উপাধি - “মামলুক সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ ও মহত্তম সুলতান”
★ ঐতিহ্য - তাঁর শাসনকাল ছিল মামলুকদের সর্বোচ্চ শান্তি, সমৃদ্ধি ও সংস্কৃতির যুগ।
★ মৃত্যু - ১৩৪১ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর পরে সাম্রাজ্যে ধীরে ধীরে অস্থিতিশীলতা শুরু হয়।
♦️বাহরী ও বুরজী মামলুক যুগের তুলনামূলক বৈশিষ্ট্য-
♦️ বাহরী মামলুক যুগ (১২৫০–১৩৮২ খ্রিঃ) -
★ সাম্রাজ্যের উৎপত্তি - তুর্কি (খাস তুর্কি ও কিপচাক বংশীয়) দাসসৈন্য দ্বারা প্রতিষ্ঠিত
★ প্রথম সুলতান - ইজ্জুদ্দীন আইবেক
★ রাজধানী - কায়রো (দু’যুগেই একই রাজধানী)
★ সামরিক চরিত্র - তুর্কি অশ্বারোহী সেনাবাহিনী ছিল প্রধান শক্তি
★ রাজনৈতিক অবস্থা - তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল; রাষ্ট্রব্যবস্থা সংগঠিত
★ শাসনব্যবস্থা - কেন্দ্রীভূত; সুলতানের ক্ষমতা দৃঢ়
★ বিখ্যাত সুলতানগণ - বাইবার্স, কালাউন, আন-নাসির মুহাম্মদ
★ স্থাপত্য ও সংস্কৃতি - নিযামিয়া মাদরাসার ধাঁচে বহু মাদরাসা ও মসজিদ নির্মিত হয় (যেমন: বাইবার্স মসজিদ)
★ শিক্ষা ও বিদ্যা - কুরআন, ফিকহ, ইতিহাস, গণিত ইত্যাদি বিদ্যা বিকাশ লাভ করে
★ অর্থনীতি ও বাণিজ্য - ভূমধ্যসাগর ও লোহিত সাগরের বাণিজ্যপথের নিয়ন্ত্রণ; অর্থনীতি সমৃদ্ধ
★ বহিঃশত্রুর সঙ্গে সম্পর্ক - ক্রুসেডার ও মঙ্গোলদের পরাজিত করে ইসলামী জগৎ রক্ষা করে
★ পতনের কারণ - অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও রাজদরবারে ষড়যন্ত্র
★ পতনের বছর - ১৩৮২ খ্রিষ্টাব্দে শেষ
♦️ বুরজী মামলুক যুগ (১৩৮২–১৫১৭ খ্রিঃ) -
★ সার্কেশীয় (ককেশীয় অঞ্চলীয়) দাসসৈন্য দ্বারা প্রতিষ্ঠিত
★ প্রথম সুলতান - বারকুক
★ রাজধানী - কায়রো (দু’যুগেই একই রাজধানী)
★ সামরিক চরিত্র - ককেশীয় পদাতিক ও অশ্বারোহী বাহিনী ছিল শক্তিশালী
★ রাজনৈতিক অবস্থা - ক্রমাগত ষড়যন্ত্র ও অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়
★ শাসনব্যবস্থা - সুলতানের ক্ষমতা দুর্বল, আমিররা বেশি প্রভাবশালী
★ বিখ্যাত সুলতানগণ - বারকুক, বারসবাই, কাইতবাই
★ স্থাপত্য ও সংস্কৃতি - ইসলামী স্থাপত্যে মার্বেল, গম্বুজ, মিনার ও খোদাই শিল্পের উৎকর্ষ ঘটে (যেমন: কাইতবাই মসজিদ)
★ শিক্ষা ও বিদ্যা - স্থাপত্য, চিকিৎসা ও জ্যোতির্বিদ্যা উন্নত হয়
★ অর্থনীতি ও বাণিজ্য - পরবর্তীকালে বাণিজ্য ইউরোপীয়দের হাতে চলে যায়; অর্থনীতি দুর্বল হয়
★ বহিঃশত্রুর সঙ্গে সম্পর্ক - অটোমান সাম্রাজ্যের উত্থানে দুর্বল হয়ে পড়ে
★ পতনের কারণ - দুর্বল প্রশাসন, অটোমানদের আক্রমণ, অর্থনৈতিক বিপর্যয়
★ পতনের বছর - ১৫১৭ খ্রিষ্টাব্দে সম্পূর্ণ পতন
(৭) মামলুক সাম্রাজ্য স্থায়ী হয় ১২৫০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৫১৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় ২৬৭ বছর।
(৮) পতনের কারণ (সংক্ষেপে) -
★ অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ ও দুর্নীতি
★ অটোমান সাম্রাজ্যের উত্থান
★ অবশেষে ১৫১৭ খ্রিষ্টাব্দে অটোমান সুলতান সেলিম প্রথম কায়রো দখল করেন। আর এর মাধ্যমেই বিশাল মামলুক সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে।