ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন, ২০২৫ (ইংরেজি: Waqf (Amendment) Act, 2025) মূলত ভারতের সংসদে পেশ ও পাশ হওয়া একটি আইন-বিল, যা ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের আস্থা ও সম্পত্তি বিষয়ক “ওয়াকফ” ব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন আনার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো—
“ওয়াকফ” কী?
-
“ওয়াকফ” শব্দ আরবী “ওয়াকফা” থেকে এসেছে, যার অর্থ হলো কোনো স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তিকে ধর্মীয় বা জনহিতকর উদ্দেশ্যে চিরতরে উৎসর্গ করা।
-
সাধারণভাবে বলতে গেলে, একজন মুসলিম যদি নিজের কোনো সম্পত্তি (জমি, বিল্ডিং, অর্থ ইত্যাদি) ধর্মীয় বা খয়রাতের কাজে দান করেন — সেটি হয় ওয়াকফ সম্পত্তি।
-
একবার ওয়াকফ করা হলে ঐ সম্পত্তির ধরন সাধারণ ব্যক্তিগত মালিকানায় রূপান্তরিত হয় না; মূল উদ্দেশ্য হয় ধর্মীয়/সেবামূলক।
সংশোধনী বিলে কি কি পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হয়েছে?
নিচে এই বিলের মূল প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলোর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেওয়া হলো:
-
বর্তমান বা পুরনো আইন অনুযায়ী, ওয়াকফ বোর্ড-এর হাতে ছিল সম্পত্তি ওয়াকফ কিনা বা নয় সেটা নির্ধারণের একচ্ছত্র অধিকার, এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকারি পর্যালোচনা বা রিভিউ সীমাবদ্ধ ছিল।
-
নতুন বিলে সেই একচ্ছত্র অধিকার থেকে কিছুটা সরে আসার প্রস্তাব রয়েছে; যেমন “কোন সম্পত্তি ওয়াকফ কি না”- তা চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করা হতে পারে জেলা শাসক বা সমমানের সরকারি আধিকারিকের (রেভিনিউ অফিসার) হাতে।
-
ওয়াকফ বোর্ডে বিভিন্ন সম্প্রদায় ও লিঙ্গের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে (যেমন নারী প্রতিনিধিত্ব, বিভিন্ন মুসলিম সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ ইত্যাদি)।
-
ওয়াকফ সম্পত্তি সংক্রান্ত রেকর্ডিং, নিবন্ধন, নিরীক্ষণ ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধির জন্য একটি কেন্দ্রীয় পোর্টালের ধারাবাহিকতা উল্লেখ রয়েছে।
-
আইন সংশোধনের পেছনে যুক্তি হলো— “ওয়াকফ সম্পত্তি ও ব্যবস্থাপনাতে দুর্নীতি, অপব্যবহার ও সম্পত্তি-দখল” বিষয়ক অভিযোগ রয়েছে, এজন্য সংস্কার প্রয়োজন।
বিতর্ক ও আপত্তি
এই সংশোধনী নিয়ে বেশ ঘন-বিতর্ক হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হলো:
-
বিরোধীদের যুক্তি— এই বিল দিয়ে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের (বিশেষত মুসলিম সম্প্রদায়ের) সম্পত্তিতে সরকারি হস্তক্ষেপ বাড়ছে, ধর্মসংক্রান্ত স্বাধীনতায় প্রভাব পড়তে পারে।
-
বোর্ডে অমুসলিম সদস্য অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব, যা একাংশের মতে ধর্মীয়-সাংগঠনিক স্বায়ত্তশাসনের জন্য প্রশ্ন তুলেছে।
-
সংশোধনীর ফলে ওয়াকফ বলে ঘোষিত সম্পত্তি ‘চ্যালেঞ্জ’ করা যাবে এমন ধারার প্রস্তাব রয়েছে, যা পূর্বের আইনানুসারে ছিল না।