ভুট্টা চাষে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে, যা ফসলের উৎপাদন কমিয়ে দেয়। এই রোগগুলোর সঠিক পরিচর্যা এবং প্রতিকারের মাধ্যমে ফসলের ক্ষতি কমানো সম্ভব।
ভুট্টার প্রধান রোগ ও প্রতিকার
১. পাতা ঝলসানো রোগ (Leaf Blight)
-
লক্ষণ:
-
পাতার উপর লম্বা লম্বা বাদামি দাগ দেখা যায়।
-
দাগগুলো একত্রিত হয়ে পাতা শুকিয়ে যায়।
-
কারণ:
-
ছত্রাক (Helminthosporium turcicum)।
-
প্রতিকার:
-
রোগ প্রতিরোধী জাত নির্বাচন করুন।
-
চাষের পরে জমিতে ফসলের অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলুন।
-
প্রোপিকোনাজল বা ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করুন।
২. পোকার আক্রমণজনিত রোগ (Stem Borer)
-
লক্ষণ:
-
কান্ডের ভেতর পোকা ঢুকে ফসল খেয়ে ফেলে।
-
ফলন কমে যায়।
-
প্রতিকার:
-
ডিম বা লার্ভা দেখে হাত দিয়ে তুলে ধ্বংস করুন।
-
বায়ারথ্রিন বা কার্বারিল জাতীয় কীটনাশক স্প্রে করুন।
৩. গোল্ডেন স্ট্রিক ভাইরাস (Maize Streak Virus)
-
লক্ষণ:
-
পাতায় সোনালি দাগ দেখা যায়।
-
গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়।
-
কারণ:
-
এফিড ও হোয়াইটফ্লাই পোকা ভাইরাস ছড়ায়।
-
প্রতিকার:
-
রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করুন।
-
এফিড ও হোয়াইটফ্লাই নিয়ন্ত্রণে কীটনাশক ব্যবহার করুন।
৪. ব্ল্যাক রোট (Black Rot)
-
লক্ষণ:
-
কান্ডে কালো দাগ দেখা যায়।
-
গাছ মরে যেতে পারে।
-
কারণ:
-
ব্যাকটেরিয়া (Xanthomonas species)।
-
প্রতিকার:
-
জমি নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন।
-
ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী জাত চাষ করুন।
৫. পচন রোগ (Root and Stalk Rot)
-
লক্ষণ:
-
কান্ডের গোড়া পচে যায়।
-
গাছ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না।
-
কারণ:
-
Fusarium এবং Pythium ছত্রাক।
-
প্রতিকার:
-
জমিতে সঠিক পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করুন।
-
ম্যানকোজেব বা কার্বেনডাজিম ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করুন।
৬. রাইস স্মাট (Common Smut)
-
লক্ষণ:
-
দানা ও গাছের অন্যান্য অংশে কালো রঙের ফুলকা দেখা যায়।
-
প্রতিকার:
-
আক্রান্ত গাছ তুলে নষ্ট করুন।
-
রোগমুক্ত ও স্বাস্থ্যকর বীজ ব্যবহার করুন।
৭. ডাউনি মিলডিউ (Downy Mildew)
-
লক্ষণ:
-
পাতায় হলুদ দাগ এবং সাদা ছত্রাকের প্রলেপ দেখা যায়।
-
গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়।
-
প্রতিকার:
-
ছত্রাকনাশক যেমন মেটালাক্সিল ব্যবহার করুন।
-
ফসল ঘন করে চাষ করবেন না।
৮. জাব পোকা আক্রমণ (Aphid Attack)
-
লক্ষণ:
-
পাতার রস শুষে নেয়, ফলে পাতা বিবর্ণ হয়।
-
গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে।
-
প্রতিকার:
-
এফিড প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করুন।
-
নিম তেল বা পাইরেথ্রয়েড জাতীয় কীটনাশক ব্যবহার করুন।
সাধারণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা
-
রোগ প্রতিরোধী জাত নির্বাচন।
-
জমি নিয়মিত পরিষ্কার ও ভালোভাবে প্রস্তুত করা।
-
ফসল চক্র (Crop Rotation) পালন করা।
-
সুষম সার ও পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।
-
আক্রান্ত গাছ বা অংশ দ্রুত তুলে ধ্বংস করা।
-
বীজ শোধন (Seed Treatment) করে বীজ বপন।
উপযুক্ত যত্ন ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ভুট্টার রোগ প্রতিরোধ এবং উচ্চ ফলন নিশ্চিত করা সম্ভব।