মাছ ও ধানের মিশ্র চাষ (Integrated Rice-Fish Farming) একটি প্রাচীন ও কার্যকর কৃষি পদ্ধতি, যা পরিবেশবান্ধব এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। এর উপকারিতা নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. জমির সর্বোত্তম ব্যবহার
-
একই জমিতে ধান এবং মাছ উত্পাদন করে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়।
-
এক জমি থেকে দ্বৈত আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
২. পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি
-
মাছ ধানের জমির পানিতে থাকা ক্ষতিকারক পোকা ও কীটপতঙ্গ খেয়ে ফেলে, ফলে কীটনাশকের ব্যবহার কমে।
-
মাছের মল ধানের জন্য প্রাকৃতিক সার হিসেবে কাজ করে।
৩. পানির গুণগত মান উন্নত করা
-
ধানের জমিতে মাছ থাকার কারণে পানি চলাচল স্বাভাবিক থাকে, যা ধানগাছের শিকড়ে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করে।
-
পানি দূষণের ঝুঁকি কমে।
৪. পোকামাকড় ও রোগ নিয়ন্ত্রণ
-
মাছ ধানের জমির পোকামাকড় খেয়ে ফেলে, ফলে ফসলের ক্ষতি কম হয়।
-
মাছের উপস্থিতিতে মশার লার্ভা ধ্বংস হয়, যা ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি কমায়।
৫. উৎপাদন খরচ কমানো
-
মাছ চাষে অতিরিক্ত খাদ্য দেওয়ার প্রয়োজন কম, কারণ তারা ধানের জমি থেকে প্রাকৃতিক খাদ্য পায়।
-
কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমে যাওয়ায় খরচ কম হয়।
৬. অধিক আয়ের সুযোগ
-
ধানের পাশাপাশি মাছ বিক্রি করে দ্বিগুণ আয়ের সুযোগ তৈরি হয়।
-
মাছের প্রজনন থেকে বাড়তি আয়ের সুযোগ থাকে।
৭. পুষ্টি সরবরাহ বৃদ্ধি
-
ধান উৎপাদনের পাশাপাশি মাছ থেকে প্রোটিনের উৎস পাওয়া যায়, যা পরিবার এবং স্থানীয় মানুষের পুষ্টি চাহিদা মেটায়।
৮. মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি
-
মাছের মল ও অন্যান্য জৈব পদার্থ জমিতে জমা হয়ে মাটির উর্বরতা বাড়ায়।
-
রাসায়নিক সারের ব্যবহার না করেও উত্পাদনশীলতা ধরে রাখা সম্ভব।
৯. জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া
-
এই পদ্ধতিতে জমি এবং পানি ব্যবস্থাপনা ভালো হয়, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সহায়ক।
১০. স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ
-
মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণী ধানের জমিতে বসবাস করে জীববৈচিত্র্য বাড়ায়।
-
প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা হয়।
মাছ ও ধানের মিশ্র চাষ কৃষকদের জন্য আর্থিকভাবে লাভজনক এবং পরিবেশ সুরক্ষার একটি কার্যকর পদ্ধতি। এটি গ্রামীণ অর্থনীতি এবং খাদ্য নিরাপত্তার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।