তাফসিরে বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি বলতে কুরআন বা হাদীসের ব্যাখ্যা বা তাফসিরে বিজ্ঞান, যুক্তি, এবং বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা বোঝানো হয়। এর মাধ্যমে ধর্মীয় পাঠ ও ধর্মীয় দর্শনকে আধুনিক বৈজ্ঞানিক জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার সাথে মিলিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়, যাতে বিজ্ঞান ও ধর্ম একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে।
তাফসিরে বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিভঙ্গির ভূমিকা:
1. ধর্ম ও বিজ্ঞানকে সঙ্গতিপূর্ণ করা: তাফসিরে বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি ধর্মের মৌলিক সত্তাকে অক্ষুণ্ন রেখে বিজ্ঞানের আবিষ্কার এবং গবেষণার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যাখ্যা প্রদান করে। এতে ধর্ম ও বিজ্ঞান একে অপরের পরিপূরক হয়ে ওঠে, যেমন কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে বৈজ্ঞানিক সত্যের সঙ্গে সাদৃশ্য খোঁজা।
2. বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি বুঝতে সহায়তা: বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি ধর্মীয় পাঠে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির পরিপ্রেক্ষিতে নতুন দৃষ্টিকোণ এনে দেয়, যেমন পৃথিবী, মহাবিশ্ব, জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে কুরআনে যে আয়াত রয়েছে তা নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।
3. ধর্মীয় শিক্ষা সহজবোধ্য করা: বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি ধর্মীয় শিক্ষা এবং কুরআন ও হাদীসের তাফসিরকে আধুনিক সমাজে আরো সহজবোধ্য এবং গ্রহণযোগ্য করে তোলে। মানুষ যাতে ধর্মীয় শিক্ষা বিজ্ঞান ও বাস্তব জ্ঞান থেকে বিচ্ছিন্ন না হয়, তা নিশ্চিত করা যায়।
4. বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে সমন্বয় সৃষ্টি: এটি ধর্মীয় চিন্তা এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে, ফলে ধর্মীয় অনুসরণকারীরা বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে অধিক আগ্রহী হতে পারে এবং বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে আরো শক্তিশালী করতে পারে।
5. মুনাফিকতা ও অজ্ঞতা থেকে মুক্তি: বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে তাফসিরের মধ্যে অজ্ঞতা, মিথ্যা ব্যাখ্যা এবং কুসংস্কারের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এটি মানুষের মননকে প্রসারিত করে এবং কুরআনের সত্যতা এবং আধুনিক বিজ্ঞানকে একত্রিত করে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করতে সহায়ক হয়।
অতএব, তাফসিরে বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি ধর্ম ও বিজ্ঞানকে একত্রিত করার মাধ্যমে মানুষের চিন্তাভাবনাকে প্রসারিত করে এবং তাদের জীবনে ভারসাম্য ও বাস্তববাদিতা এনে দেয়।