অণুজীবগুলো প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে, যার মাধ্যমে তারা বেঁচে থাকে এবং বৃদ্ধি সম্ভব করে। নিচে কয়েকটি প্রধান কৌশল উল্লেখ করা হলো:
১. এক্সট্রিমোফিলিজম (Extremophilism): কিছু অণুজীব অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য বিশেষ অভিযোজন তৈরি করে। এদেরকে এক্সট্রিমোফাইলস বলা হয়। যেমন:
-
থার্মোফাইলস (Thermophiles): এরা উচ্চ তাপমাত্রায় (যেমন, গরম প্রস্রবণ বা আগ্নেয়গিরির কাছাকাছি) বেঁচে থাকে।
-
সাইক্রোফাইলস (Psychrophiles): এরা অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রায় (যেমন, মেরু অঞ্চলের বরফ বা গভীর সমুদ্র) বেঁচে থাকে।
-
অ্যাসিডোফাইলস (Acidophiles): এরা অত্যন্ত অম্লীয় পরিবেশে (যেমন, অ্যাসিড খনি নিষ্কাশন) বেঁচে থাকে।
-
অ্যালকালিফিলস (Alkaliphiles): এরা অত্যন্ত ক্ষারীয় পরিবেশে (যেমন, সোডা হ্রদ) বেঁচে থাকে।
-
হালোফাইলস (Halophiles): এরা উচ্চ লবণাক্ত পরিবেশে (যেমন, লবণ হ্রদ) বেঁচে থাকে।
২. স্পোর গঠন (Spore Formation): কিছু ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে স্পোর তৈরি করে। স্পোরগুলো অত্যন্ত প্রতিরোধী কাঠামো, যা শুষ্কতা, তাপমাত্রা পরিবর্তন এবং রাসায়নিক পদার্থের মতো চরম অবস্থার বিরুদ্ধে টিকে থাকতে পারে। যখন পরিবেশ অনুকূল হয়, তখন স্পোরগুলো অঙ্কুরিত হয়ে সক্রিয় অণুজীব হিসেবে ফিরে আসে।
৩. বায়োফিল্ম গঠন (Biofilm Formation): অণুজীবগুলো একে অপরের সাথে একত্রিত হয়ে একটি প্রতিরক্ষামূলক ম্যাট্রিক্স তৈরি করে, যাকে বায়োফিল্ম বলা হয়। বায়োফিল্ম তাদের প্রতিকূল পরিবেশ থেকে রক্ষা করে এবং পুষ্টি ও আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
৪. জিনগত অভিযোজন (Genetic Adaptation): অণুজীবগুলো তাদের জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকার ক্ষমতা অর্জন করে। জিনগত পরিবর্তন তাদের নতুন এনজাইম তৈরি করতে সাহায্য করে, যা চরম পরিস্থিতিতেও কাজ করতে পারে।
৫. বিপাকীয় অভিযোজন (Metabolic Adaptation): কিছু অণুজীব তাদের বিপাকীয় প্রক্রিয়া পরিবর্তন করে প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি এবং পুষ্টি সংগ্রহ করে। যেমন, কিছু ব্যাকটেরিয়া অক্সিজেন ছাড়াই শ্বাস নিতে পারে (অ্যানারোবিক শ্বাস)।
৬. ডিএনএ মেরামত (DNA Repair): প্রতিকূল পরিবেশ ডিএনএ-এর ক্ষতি করতে পারে। কিছু অণুজীব ডিএনএ মেরামত করার জন্য বিশেষ প্রক্রিয়া তৈরি করে, যা তাদের জিনগত স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।