বায়োটেকনোলজি (Biotechnology) মাধ্যমে অনেক ধরনের হরমোন তৈরি করা সম্ভব, যার মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ হরমোন হলো:
১. ইনসুলিন (Insulin):
বায়োটেকনোলজির মাধ্যমে ইনসুলিন তৈরি করা হয় যা ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ইনসুলিন সাধারণত অগ্ন্যাশয় থেকে উৎপন্ন হয়, তবে মানুষের শরীরে ইনসুলিনের অভাব হলে তা বাইরের উৎস থেকে সরবরাহ করা প্রয়োজন। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া বা ই.কোলি (E. coli) জীবাণুতে মানব ইনসুলিনের জিন প্রবেশ করিয়ে ইনসুলিন উৎপাদন করা হয়।
২. গ্রোথ হরমোন (Growth Hormone):
গ্রোথ হরমোন বা হিউম্যান গ্রোথ হরমোন (HGH) একটি প্রাকৃতিক হরমোন যা পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন হয় এবং এটি শরীরের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। বায়োটেকনোলজির মাধ্যমে গ্রোথ হরমোন তৈরি করতে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাহায্যে ব্যাকটেরিয়া বা অন্য কোনো মাইক্রোঅর্গানিজমকে ব্যবহার করা হয়, যা গ্রোথ হরমোন উৎপাদন করতে পারে।
৩. ইস্ট্রোজেন (Estrogen) ও প্রজেস্টেরোন (Progesterone):
বায়োটেকনোলজির মাধ্যমে ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরোন হরমোনও উৎপাদিত হতে পারে। এই হরমোনগুলো মনের স্বাস্থ্য, নারীদের প্রজনন এবং মাসিক চক্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এগুলি সাধারণত মাইক্রোঅর্গানিজম বা সেল কালচার ব্যবহার করে তৈরি করা হয়।
৪. থাইরয়েড হরমোন (Thyroid Hormones):
থাইরয়েড হরমোন থাইরক্সিন (T4) এবং ট্রাইইওডোথাইরোনিন (T3), যা থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় এবং শরীরের মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণ করে। বায়োটেকনোলজি ব্যবহার করে এই হরমোনগুলি সেল কালচার বা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে উৎপন্ন করা যায়।
৫. এপিডার্মাল গ্রোথ ফ্যাক্টর (EGF):
এপিডার্মাল গ্রোথ ফ্যাক্টর (EGF) হল একটি হরমোন যা কোষের বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং ত্বক, হাড়, এবং অন্যান্য অঙ্গের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে। এটি প্রাকৃতিকভাবে মানুষের শরীরে উৎপন্ন হলেও, বায়োটেকনোলজির মাধ্যমে একে সেল কালচার বা রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ প্রযুক্তি দ্বারা প্রস্তুত করা হয়।
উপসংহার:
বায়োটেকনোলজির মাধ্যমে বিভিন্ন হরমোন যেমন ইনসুলিন, গ্রোথ হরমোন, ইস্ট্রোজেন, প্রজেস্টেরোন, থাইরয়েড হরমোন ইত্যাদি উৎপাদিত হয়। এই প্রযুক্তি স্বাস্থ্যসেবায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে রোগের চিকিৎসা এবং চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় হরমোনের অভাব পূরণ করতে।