বিশ্বের সবচেয়ে গভীর সমুদ্র হলো প্যাসিফিক বা প্রশান্ত মহাসাগর, এবং এর সবচেয়ে গভীর অংশটি হলো মারিয়ানা ট্রেঞ্চ। এই ট্রেঞ্চের সর্বনিম্ন বিন্দু, যা পৃথিবীর সবচেয়ে গভীরতম স্থান হিসেবে পরিচিত, তা হলো চ্যালেঞ্জার ডিপ। চ্যালেঞ্জার ডিপের গভীরতা প্রায় ১০,৯৮৪ মিটার (৩৬,০৩৭ ফুট)। তবে বিভিন্ন গবেষণায় প্রাপ্ত পরিমাপের সামান্য ভিন্নতা দেখা যায়, যা ১০,৯৮৪ মিটার থেকে ১১,০৩৪ মিটার পর্যন্ত হতে পারে।
মারিয়ানা ট্রেঞ্চ পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত এবং এটি গوام দ্বীপের কাছাকাছি। ট্রেঞ্চটি প্রায় ২,৫৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৬৯ কিলোমিটার চওড়া। এর সৃষ্টি হয়েছে দুটি টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষে, যেখানে প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেট ফিলিপাইন প্লেটের নিচে প্রবেশ করছে। এই ধরণের ভূ-প্রক্রিয়াকে সাবডাকশন জোন বলা হয়, যা পৃথিবীর ভূত্বকের গভীরতম অঞ্চল গঠন করে।
চ্যালেঞ্জার ডিপের গভীরতা এমন যে সেখানে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে না। এটি সম্পূর্ণ অন্ধকার এবং তাপমাত্রা প্রায় হিমাঙ্কের কাছাকাছি থাকে। এই গভীর জায়গায় চাপ সমুদ্রপৃষ্ঠের চাপের তুলনায় প্রায় ১,০০০ গুণ বেশি। এত প্রতিকূল পরিবেশের পরও বিজ্ঞানীরা সেখানে বিশেষ ধরনের সামুদ্রিক জীব যেমন অ্যামিফোড এবং সামুদ্রিক শসার অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন, যা গভীর সমুদ্রের চরম চাপ ও শীতল পরিবেশে বেঁচে থাকে।
মারিয়ানা ট্রেঞ্চ প্রথমবার মানুষের নজরে আসে ১৮৭৫ সালে ব্রিটিশ জাহাজ চ্যালেঞ্জার-এর অভিযান চলাকালীন। সেই অভিযানের নাম অনুসারে গভীরতম স্থানটির নামকরণ করা হয় "চ্যালেঞ্জার ডিপ"। পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে সুইস প্রকৌশলী জ্যাক পিকার্ড এবং মার্কিন নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ডন ওয়ালশ প্রথমবারের মতো তাদের সাবমেরিন ট্রিয়েস্টে ব্যবহার করে চ্যালেঞ্জার ডিপে পৌঁছান। ২০১২ সালে বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা জেমস ক্যামেরন এককভাবে এই গভীরতায় ডুব দেওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন।
মারিয়ানা ট্রেঞ্চ এবং চ্যালেঞ্জার ডিপ গবেষণার বিষয়বস্তু হিসেবে বিজ্ঞানীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন এবং গভীর সমুদ্রের প্রাণীজগৎ সম্পর্কে অজানা তথ্য উন্মোচনে সহায়ক।