গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ (Gravitational Wave) হলো স্থান-কালের (Space-time) মধ্যে সৃষ্ট তরঙ্গ। আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব অনুসারে, যখন কোনো বিশাল বস্তুর ত্বরণ হয়, তখন স্থান-কালের মধ্যে যে বক্রতা সৃষ্টি হয়, তা তরঙ্গের আকারে ছড়িয়ে পড়ে। এই তরঙ্গই হলো গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ।
সহজ ভাষায়, যখন মহাবিশ্বের কোনো বিশাল বস্তু, যেমন - ব্ল্যাক হোল (Black hole), নিউট্রন তারা (Neutron star) বা সুপারনোভা (Supernova) বিস্ফোরিত হয়, তখন স্থান-কালের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এই আলোড়ন ঢেউয়ের মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, অনেকটা পুকুরে ঢিল ছুড়লে যেমন তরঙ্গ সৃষ্টি হয়। এই ঢেউগুলোই হলো গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ।
গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ এর বৈশিষ্ট্য:
* এরা আলোর গতিতে স্থান-কালের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
* এরা স্থান-কালকে সংকুচিত এবং প্রসারিত করতে পারে।
* এরা খুবই দুর্বল তরঙ্গ, তাই এদের শনাক্ত করা খুব কঠিন।
গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ এর উৎস:
* ব্ল্যাক হোল এর সংঘর্ষ।
* নিউট্রন তারার সংঘর্ষ।
* সুপারনোভা বিস্ফোরণ।
* মহাবিশ্বের শুরুতে সৃষ্ট হওয়া তরঙ্গ (Primordial gravitational waves)।
গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ এর গুরুত্ব:
* এরা মহাবিশ্বের অনেক রহস্য উন্মোচন করতে সাহায্য করে।
* এরা ব্ল্যাক হোল এবং নিউট্রন তারার মতো চরম বস্তু সম্পর্কে তথ্য দেয়।
* এরা মহাবিশ্বের সৃষ্টি এবং বিবর্তন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান বাড়াতে সাহায্য করে।
গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ এর আবিষ্কার:
২০১৫ সালে লাইগো (LIGO) নামক একটি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা প্রথমবারের মতো গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। দুটি ব্ল্যাক হোলের সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ তারা শনাক্ত করে। এই আবিষ্কারটি পদার্থবিজ্ঞানে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ শনাক্ত করার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের এমন অনেক ঘটনা পর্যবেক্ষণ করতে পারছেন যা আগে সম্ভব ছিল না। এটি জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণায় একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে।