আলবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব বা Theory of Relativity দুটি মূল ধারণার উপর ভিত্তি করে গঠন করা হয়েছে: বিশ্বস্ত আপেক্ষিকতা (Special Relativity) এবং সাধারণ আপেক্ষিকতা (General Relativity)।
১. বিশ্বস্ত আপেক্ষিকতা (Special Relativity):
১৯০৫ সালে আইনস্টাইন তাঁর বিশ্বস্ত আপেক্ষিকতা তত্ত্ব প্রবর্তন করেন। এই তত্ত্বের মূল কথা হল:
-
বিজ্ঞানগত সূত্রের আপেক্ষিকতা: কোনো আবেগগত বা বিশৃঙ্খল অবস্থা (অথবা "এবসোলুট পয়েন্ট") নেই। সমস্ত শারীরিক আইন সব পর্যবেক্ষক ও স্থানিক গতি অনুযায়ী সমান হবে।
-
আলো (light) এবং সময়ের আপেক্ষিকতা: আলো সর্বদা একই গতিতে চলে (প্রায় ৩ লাখ কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ড) এবং এটি পর্যবেক্ষকের গতির ওপর নির্ভর করে পরিবর্তন হয় না।
-
সময় সম্প্রসারণ এবং দৈর্ঘ্য সংকোচন: খুব উচ্চ গতিতে চলমান বস্তুগুলির জন্য সময় ধীর হয়ে যায় এবং তাদের দৈর্ঘ্য সংকুচিত হয়।
২. সাধারণ আপেক্ষিকতা (General Relativity):
১৯১৫ সালে আইনস্টাইন তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব উপস্থাপন করেন, যা মহাকর্ষের নতুন ব্যাখ্যা দেয়। এর মধ্যে:
-
মহাকর্ষ একটি শক্তি নয়, বরং স্থান-কাল বক্রতা: মহাকর্ষকে স্থান-কাল বা স্পেসটাইম এর বক্রতা হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যেখানে বড় পিণ্ড যেমন পৃথিবী বা সূর্য স্থান-কাল বক্রতা সৃষ্টি করে এবং এই বক্রতার মধ্যে অন্য বস্তুর গতিপথ পরিবর্তিত হয়।
-
স্পেসটাইম গঠন ও কনটিনিউম: এটি আছন্ন শর্তে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছে, যা স্থান এবং সময় একে অপরের সাথে সম্পৃক্ত এবং তার বক্রতা ভারী বস্তুর উপস্থিতির কারণে ঘটে।
বিজ্ঞানে এর প্রভাব:
-
জ্যোতির্বিজ্ঞানে বিপ্লব: সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব একাধিক মহাকাশ বিষয়ের ব্যাখ্যা দিয়েছে, যেমন ব্ল্যাক হোল, মহাকর্ষীয় তরঙ্গ (gravitational waves), এবং মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ। যেমন, ব্ল্যাক হোল এবং মহাকর্ষীয় তরঙ্গ আবিষ্কার এটির মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে।
-
গ্রহ-নক্ষত্র এবং মহাবিশ্বের গঠন: সাধারণ আপেক্ষিকতার সাহায্যে মহাবিশ্বের বিস্তার এবং গ্রহ নক্ষত্রের গতিবিধি আরও স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়েছে।
-
নেভিগেশন সিস্টেম (GPS): স্যাটেলাইট ভিত্তিক নেভিগেশন সিস্টেমে (যেমন, GPS) আপেক্ষিক তত্ত্বের অণুগত সংশোধন প্রয়োজন কারণ স্যাটেলাইটের গতির কারণে স্থানীয় সময় এবং পৃথিবীর সময়ের মধ্যে পার্থক্য হতে পারে।
আলবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব বিজ্ঞানকে fundamentally বদলে দিয়েছে, তা শুধু মহাকাশ ও পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নয়, এমনকি প্রতিদিনের প্রযুক্তি ও জীবনের ক্ষেত্রেও তার প্রভাব লক্ষণীয়।