সমুদ্রের পানি লবণাক্ত হওয়া সত্ত্বেও সেখানে বিভিন্ন ধরণের উদ্ভিদ ও প্রাণী বাস করে। এর কারণ হলো এই উদ্ভিদ ও প্রাণীরা লবণাক্ত পরিবেশের সাথে নিজেদেরকে অভিযোজিত করে নিয়েছে। নিচে কয়েকটি কারণ ব্যাখ্যা করা হলো:
১. অভিযোজন (Adaptation):
* সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও প্রাণীরা দীর্ঘ সময় ধরে লবণাক্ত পরিবেশে বাস করার কারণে তাদের শরীরে কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য তৈরি হয়েছে, যা তাদেরকে এই পরিবেশে টিকে থাকতে সাহায্য করে।
* কিছু মাছের শরীরে বিশেষ অঙ্গ থাকে যা তাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত লবণ বের করে দেয়।
* কিছু উদ্ভিদের কোষ লবণ সহ্য করতে পারে।
২. অসমোরেগুলেশন (Osmoregulation):
* এটি একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে জীব তাদের শরীরের লবণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
* সামুদ্রিক প্রাণীরা তাদের শরীরের ফ্লুইড এবং পারিপার্শ্বিক পানির মধ্যে লবণের ভারসাম্য বজায় রাখে অসমোরেগুলেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।
* কিছু মাছ তাদের ফুলকার মাধ্যমে অতিরিক্ত লবণ বের করে দেয়, আবার কিছু প্রাণী কম প্রস্রাব করে শরীরে পানি ধরে রাখে।
৩. বিভিন্ন প্রকার লবণাক্ততা (Different levels of salinity):
* সমুদ্রের সব জায়গায় লবণের মাত্রা সমান নয়। কিছু অঞ্চলে লবণের মাত্রা কম থাকে, যেখানে বিভিন্ন ধরণের উদ্ভিদ ও প্রাণী সহজেই বাস করতে পারে।
* নদীর মোহনার কাছাকাছি অঞ্চলে নদীর মিষ্টি পানি মেশার কারণে লবণের মাত্রা তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
৪. কোষীয় অভিযোজন (Cellular adaptation):
* সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও প্রাণীদের কোষ লবণাক্ত পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম।
* তাদের কোষে বিশেষ প্রোটিন এবং অন্যান্য উপাদান থাকে যা কোষকে লবণের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
উদাহরণ:
* ম্যানগ্রোভ গাছ: এই গাছগুলির শিকড় লবণাক্ত পানিতে ডুবে থাকলেও তারা বেঁচে থাকতে পারে কারণ তাদের শিকড়ে লবণ প্রতিরোধের বিশেষ ব্যবস্থা আছে।
* হাঙ্গর: হাঙ্গরের শরীরে ইউরিয়া নামক একটি পদার্থ থাকে যা তাদের শরীরকে লবণাক্ত পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে।
* সামুদ্রিক শৈবাল: কিছু শৈবাল লবণের উচ্চ মাত্রা সহ্য করতে পারে এবং তারা খাদ্য হিসেবে অন্যান্য প্রাণীদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়।
সুতরাং, সমুদ্রের উদ্ভিদ ও প্রাণীরা তাদের শারীরিক গঠন, প্রক্রিয়া এবং আচরণের মাধ্যমে লবণাক্ত পরিবেশের সাথে নিজেদেরকে অভিযোজিত করে নিয়েছে এবং সে কারণেই তারা এই প্রতিকূল পরিবে
শে টিকে থাকতে পারে।