পানি দূষিত হলে তা পান করার আগে অবশ্যই শোধন করে নিতে হবে। দূষিত পানি পান করলে কলেরা, ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস, আমাশয়, পেটের পীড়া এবং চর্মরোগের মতো মারাত্মক রোগ হতে পারে। তাই, পানি শোধন করার কয়েকটি কার্যকর উপায় নিচে আলোচনা করা হলো:
১. ফুটিয়ে শোধন:
* পানি বিশুদ্ধ করার সবচেয়ে সহজ এবং বহুল প্রচলিত পদ্ধতি হলো ফুটিয়ে নেওয়া।
* বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, পানি ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি তাপমাত্রায় ৫ থেকে ২৫ মিনিট ধরে ফুটালে এর মধ্যে থাকা ক্ষতিকর জীবাণু, ভাইরাস এবং লার্ভা ধ্বংস হয়ে যায়।
* পানি যখন টগবগ করে ফুটতে শুরু করবে, তারপরও অন্তত ৫-১০ মিনিট ফুটাতে হবে।
* ফুটানো পানির স্বাদ কমে গেলে সামান্য বাতাস দিলেই স্বাদ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।
২. ক্লোরিন ট্যাবলেট বা ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার:
* যদি পানি ফুটানোর ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে ক্লোরিন ট্যাবলেট বা ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করে পানি শোধন করা যায়।
* ক্লোরিন ট্যাবলেট বা ব্লিচিং পাউডার পানির জীবাণু ধ্বংস করে।
* ব্যবহারের আগে প্যাকেজের নির্দেশিকা ভালোভাবে পড়ে নিন। সাধারণত, প্রতি লিটার পানিতে নির্দিষ্ট পরিমাণে ক্লোরিন মেশাতে হয়।
* ক্লোরিন মেশানোর পর পানি ভালোভাবে নেড়ে ৩০ মিনিট এর মতো রেখে দিন। এর মধ্যে ক্লোরিনের গন্ধ চলে যাবে এবং পানি পানের উপযুক্ত হবে।
৩. ফিল্টার ব্যবহার:
* বাজারে বিভিন্ন ধরনের ওয়াটার ফিল্টার পাওয়া যায়, যেমন - সিরামিক ফিল্টার, কার্বন ফিল্টার, আরও অনেক আধুনিক ফিল্টার।
* এই ফিল্টারগুলো পানির ময়লা, কাদা, জীবাণু এবং অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ দূর করতে পারে।
* ফিল্টার কেনার আগে এর গুণমান এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত।
৪. ফিটকিরি ব্যবহার:
* ফিটকিরি ব্যবহার করেও পানি কিছুটা পরিষ্কার করা যায়।
* একটি পাত্রে দূষিত পানি নিয়ে তাতে পরিমাণ মতো ফিটকিরি মিশিয়ে কয়েক ঘণ্টা রেখে দিন।
* ফিটকিরি মেশানোর পর পানির ময়লা তলানিতে জমা হবে এবং উপরের পানি পরিষ্কার হবে।
* উপরের পরিষ্কার পানি সাবধানে অন্য পাত্রে ঢেলে নিন। তবে এই পদ্ধতিতে পানি সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত হয় না।
৫. সোলার ডিসইনফেকশন (SODIS):
* এই পদ্ধতিতে সূর্যের আলো ব্যবহার করে পানি শোধন করা হয়।
* পরিষ্কার প্লাস্টিকের বোতলে পানি ভরে ৬ ঘণ্টা সরাসরি সূর্যের আলোতে রেখে দিন।
* এই পদ্ধতিতে সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি পানির জীবাণু ধ্বংস করে।
৬. জৈব প্রযুক্তি (Bio Technology):
* জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করে দূষিত পানি শোধন করা একটি আধুনিক পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে মাইক্রোবস বা জীবাণু ব্যবহার করে পানির দূষিত পদার্থ দূর করা হয়।
কিছু জরুরি বিষয়:
* বৃষ্টির পানি সরাসরি পান না করাই ভালো। বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে ফিল্টার বা ফুটিয়ে পান করুন।
* নদী, পুকুর বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক উৎস থেকে সরাসরি পানি পান করা উচিত নয়।
* পানির উৎস যদি আর্সেনিক দূষিত হয়, তাহলে আর্সেনিক মুক্ত করার জন্য বিশেষ ফিল্টার ব্যবহার করতে হবে।
উপরের পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করে আপনি দূষিত পানিকে পানের উপযোগী করতে পারেন। তবে, সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি নিয়মিত পানি পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারেন, যাতে পানির গুণমান সম্পর্কে নিশ্চিত থাকা যায়।