ম্যালওয়্যার (Malware) হলো "Malicious Software" এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি এমন এক ধরনের ক্ষতিকর প্রোগ্রাম বা কোড, যা কোনো কম্পিউটার, নেটওয়ার্ক, বা ডিভাইসের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়। ম্যালওয়্যার ব্যবহারকারীর অজান্তে তাদের ডিভাইসে প্রবেশ করে ডেটা চুরি, সিস্টেমের ক্ষতি, বা অন্যান্য ক্ষতিকর কাজ করতে পারে।
বিভিন্ন ধরণের ম্যালওয়্যার বিভিন্ন উপায়ে কাজ করে। নিচে কয়েকটি প্রধান ধরণের ম্যালওয়্যার এবং তাদের কার্যক্রম আলোচনা করা হলো:
১. ভাইরাস (Virus):
ভাইরাস হলো এক ধরনের ম্যালওয়্যার যা কোনো প্রোগ্রামের সাথে যুক্ত হয়ে থাকে এবং যখন সেই প্রোগ্রামটি চালানো হয়, তখন ভাইরাসটি সক্রিয় হয়ে ওঠে। এটি অন্যান্য ফাইলে নিজেদের কপি তৈরি করে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং সিস্টেমের ক্ষতি করতে পারে। ভাইরাসের কিছু সাধারণ কাজ হলো - ফাইল ডিলিট করা, ডেটা করাপ্ট করা, সিস্টেম স্লো করে দেওয়া ইত্যাদি।
২. ওয়ার্ম (Worm):
ওয়ার্ম হলো স্ব-প্রতিলিপিকারী ম্যালওয়্যার, অর্থাৎ এটি কোনো হোস্ট প্রোগ্রামের সাহায্য ছাড়াই নিজের কপি তৈরি করে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্যান্য কম্পিউটারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ওয়ার্ম সাধারণত নেটওয়ার্ক ব্যান্ডউইথ নষ্ট করে এবং সিস্টেমের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়।
৩. ট্রোজান হর্স (Trojan Horse):
ট্রোজান হর্স হলো এমন একটি ম্যালওয়্যার যা দেখতে নিরীহ কোনো প্রোগ্রামের মতো মনে হয়, কিন্তু এর মধ্যে ক্ষতিকর কোড লুকানো থাকে। যখন ব্যবহারকারী এই প্রোগ্রামটি চালায়, তখন ট্রোজানটি সক্রিয় হয়ে সিস্টেমের ক্ষতি করে। ট্রোজান সাধারণত ব্যাকডোর তৈরি করে হ্যাকারদের সিস্টেমে প্রবেশ করতে সাহায্য করে।
৪. স্পাইওয়্যার (Spyware):
স্পাইওয়্যার হলো এমন ম্যালওয়্যার যা ব্যবহারকারীর অজান্তে তাদের কার্যকলাপ নজরদারি করে এবং তথ্য সংগ্রহ করে। এই তথ্য হ্যাকারদের কাছে পাঠানো হতে পারে। স্পাইওয়্যার সাধারণত কি-লগার (keylogger), স্ক্রিনশট ক্যাপচার, এবং ব্রাউজিং হিস্টরি ট্র্যাক করার মতো কাজ করে।
৫. অ্যাডওয়্যার (Adware):
অ্যাডওয়্যার হলো এমন ম্যালওয়্যার যা ব্যবহারকারীর ডিভাইসে অবাঞ্ছিত বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে। এটি সাধারণত ব্রাউজারের সাথে যুক্ত থাকে এবং পপ-আপ বিজ্ঞাপন, ব্যানার বিজ্ঞাপন, এবং অন্যান্য ধরণের বিজ্ঞাপন দেখায়।
৬. র্যানসমওয়্যার (Ransomware):
র্যানসমওয়্যার হলো এমন ম্যালওয়্যার যা ব্যবহারকারীর ফাইল এনক্রিপ্ট করে বা সিস্টেম লক করে দেয় এবং তারপর মুক্তিপণের (ransom) দাবি করে। মুক্তিপণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত ব্যবহারকারী তাদের ডেটা বা সিস্টেম অ্যাক্সেস করতে পারে না।
৭. রুটকিট (Rootkit):
রুটকিট হলো এমন ম্যালওয়্যার যা সিস্টেমের গভীরে লুকিয়ে থাকে এবং হ্যাকারদের সিস্টেমের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে সাহায্য করে। এটি সাধারণত অন্যান্য ম্যালওয়্যার লুকানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।
৮. বটনেট (Botnet):
বটনেট হলো অনেকগুলো কম্পিউটারের একটি নেটওয়ার্ক, যা ম্যালওয়্যার দ্বারা সংক্রমিত এবং হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। হ্যাকাররা বটনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরণের আক্রমণ চালায়, যেমন - ডিডস অ্যাটাক (DDoS attack), স্প্যাম ইমেইল পাঠানো, এবং ম্যালওয়্যার ছড়ানো।
ম্যালওয়্যার থেকে বাঁচতে কিছু সতর্কতা:
* অপরিচিত উৎস থেকে কোনো ফাইল বা প্রোগ্রাম ডাউনলোড করবেন না।
* অ্যান্টিভাইরাস এবং অ্যান্টিম্যালওয়্যার সফটওয়্যার ব্যবহার করুন এবং নিয়মিত আপডেট করুন।
* সন্দেহজনক ইমেইল বা লিংকে ক্লিক করবেন না।
* অপারেটিং সিস্টেম এবং অন্যান্য সফটওয়্যার নিয়মিত আপডেট করুন।
* শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন এবং নিয়মিত পরিবর্তন করুন।
এই সতর্কতাগুলো মেনে চললে ম্যালওয়্যার আক্রমণের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো যায়।