প্যারিস জলবায়ু চুক্তি (Paris Climate Agreement) ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্যারিসে অনুষ্ঠিত COP21 (বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন)-এ গৃহীত একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি, যার প্রধান উদ্দেশ্য হল বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণ এবং এর প্রভাব কমানো। চুক্তির প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো নিম্নরূপ:
১. গ্লোবাল গরমের বৃদ্ধি সীমিত করা
প্যারিস চুক্তির প্রধান উদ্দেশ্য হল গ্লোবাল তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ২°C এর নিচে রাখা, এবং ideally 1.5°C এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা, যা প্রাক-শিল্প বিপ্লবের সময়ের তাপমাত্রার তুলনায় হবে। এতে জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর প্রভাব (যেমন তাপপ্রবাহ, বন্যা, খরা ইত্যাদি) কমানোর চেষ্টা করা হবে।
২. নেট শূন্য কার্বন নির্গমন অর্জন
চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল নেট শূন্য কার্বন নির্গমন অর্জন, যার মানে হল যে ২০৫০ সাল নাগাদ মানবজাতি যতটুকু কার্বন নির্গমন করবে, ততটুকু কার্বন শোষণ ও প্রতিস্থাপন করতে হবে। এটি বিভিন্ন দেশের জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে অর্জন করতে হবে।
৩. আর্থিক সহায়তা এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা
উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তাদের জলবায়ু সম্পর্কিত সংকট মোকাবিলায় সাহায্য করার জন্য উন্নত দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে বলা হয়েছে। প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহায়তা করার জন্য দেওয়া হবে।
৪. কার্বন নির্গমন কমানোর উদ্দেশ্য নির্ধারণ
চুক্তিতে দেশগুলোকে তাদের কার্বন নির্গমন কমানোর জন্য জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (Nationally Determined Contributions - NDCs) নির্ধারণ এবং তা বৃদ্ধি করার জন্য একটি নিয়মিত পর্যালোচনা প্রক্রিয়া রাখা হয়েছে। এই অবদানগুলো প্রতি পাঁচ বছরে পর্যালোচনা করা হবে এবং সময়ের সাথে সাথে আরও উচ্চতর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হবে।
৫. ভয়েস এবং পরিবেশগত সুরক্ষা
চুক্তি পরিবেশের সুরক্ষা এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে কাজ করবে, বিশেষ করে প্রতিবন্ধী জনগণের জন্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য।
৬. প্রভাব মোকাবিলা এবং অভিযোজন
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ক্ষতির সম্মুখীন দেশগুলোকে সাহায্য করতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে, যেমন দুর্যোগ প্রস্তুতি, পানির উৎসের সুরক্ষা, কৃষি সংস্করণ ইত্যাদি।
৭. বহুপাক্ষিক সহযোগিতা
চুক্তি একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ, যেখানে বিশ্বের প্রতিটি দেশ একত্রিত হয়ে এই সংকট মোকাবিলায় সহযোগিতা করবে, এবং এটি বিশ্বজুড়ে জলবায়ু ন্যায্যতা এবং সমতার দিকে অগ্রসর হতে সহায়ক হবে।
উপসংহার:
প্যারিস জলবায়ু চুক্তির মূল লক্ষ্য হলো পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫°C এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা, নেট শূন্য কার্বন নির্গমন অর্জন করা, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় দেশের প্রতি সহায়তা প্রদান করা। এটি বৈশ্বিক উদ্যোগ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনকে মোকাবিলা করতে এবং পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখার জন্য একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ।