গ্রিক সভ্যতায় গণতন্ত্রের জন্ম হয়েছিল বিশেষ করে আথেন্স শহরে, যেটি ছিল প্রাচীন গ্রিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহররাষ্ট্র। গণতন্ত্রের জন্মের প্রক্রিয়া ছিল একটি ধাপে ধাপে বিকাশিত ব্যবস্থা। এর মূল কারণগুলো ছিল:
1. সোলোনের সংস্কার (৬১০-৫৮০ খ্রিস্টপূর্ব):
গ্রিসের আথেন্সে সোলোন নামক একজন নেতা সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কার শুরু করেন। তিনি ঋণের বোঝা কমানোর জন্য আইন প্রণয়ন করেন এবং সাধারণ মানুষকে অধিকারের সুযোগ দেন। এই সংস্কারের ফলে সমতার প্রতি মনোভাব বৃদ্ধি পায়।
2. ক্লিসথেনিসের সংস্কার (৫৩০-৪৮০ খ্রিস্টপূর্ব):
ক্লিসথেনিস গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠায় আরও বড় ভূমিকা রাখেন। তিনি আথেন্সের প্রশাসনিক কাঠামোকে নতুন করে সংগঠিত করেন এবং সাধারণ জনগণের মতামত গ্রহণে উৎসাহ দেন। তিনি দ্বিতীয় পরিষদ (দেলিবারেটিভ কাউন্সিল) প্রতিষ্ঠা করেন, যা জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করত।
3. পেরিক্লিসের নেতৃত্ব (৪৯০-৪৩০ খ্রিস্টপূর্ব):
পেরিক্লিস, যিনি আথেন্সের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন, গণতন্ত্রের বিকাশের পরবর্তী ধাপ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার অধীনে, সাধারণ নাগরিকদের ভোটের অধিকার এবং নির্বাচনের মাধ্যমে শাসক নির্ধারণের প্রক্রিয়া আরও সুসংহত হয়। তিনি জনগণের সামরিক ও অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছিলেন এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে শক্তিশালী করেন।
4. জনগণের অংশগ্রহণ:
প্রাচীন গ্রিসের গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল নাগরিকদের সরাসরি শাসনে অংশগ্রহণ। আথেন্সে, পুরুষ নাগরিকরা সরাসরি পরিষদে অংশগ্রহণ করে আইন প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নিতেন। ভোটদানের মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মকর্তা নির্বাচন করা হতো, এবং সুতরাং শাসকরা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতেন।
5. দাসত্বের প্রথা এবং সীমাবদ্ধতা:
তবে, গ্রিক গণতন্ত্রের কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। শুধুমাত্র আথেন্সের পুরুষ নাগরিকরা ভোট দেওয়ার অধিকার রাখতেন, নারীরা, দাসরা এবং বিদেশীরা এই অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। সুতরাং, এটি একটি সরাসরি গণতন্ত্র ছিল, তবে তা পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্র ছিল না।
এইভাবে, গ্রিক সভ্যতায় গণতন্ত্রের জন্ম হয়েছিল এবং তা পরবর্তী সময়ে পশ্চিমা রাজনীতি ও সমাজব্যবস্থার ভিত্তি তৈরি করে।