বাংলাদেশের দণ্ডবিধি, ১৮৬০ অনুযায়ী, হত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তি নির্ধারণের ক্ষেত্রে আদালত বিচারকার্যের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, ধারা ৩০২ এর অধীনে হত্যার জন্য মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। তবে, এই শাস্তি নির্ধারণ করার সময় বিচারক বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনায় নিয়ে থাকেন।
মৃত্যুদণ্ড প্রদানের পরিস্থিতি:
মৃত্যুদণ্ড একটি চরম শাস্তি, এবং এটি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু গুরুতর এবং অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে দেওয়া হয়। বিচারক নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিচার করেন:
-
অপরাধের প্রকৃতি ও গুরুতরতা:
-
অপরাধটি যদি পূর্বপরিকল্পিত এবং ইচ্ছাকৃত হয়।
-
অপরাধটি যদি নির্মম, নিষ্ঠুর বা নৃশংস পদ্ধতিতে সংঘটিত হয়।
-
ভুক্তভোগী যদি বিশেষভাবে দুর্বল হয়, যেমন শিশু, মহিলা বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি।
-
প্রমাণের স্পষ্টতা:
-
অপরাধীর বিরুদ্ধে যদি সন্দেহাতীত এবং নির্ভুল প্রমাণ থাকে।
-
সাক্ষী ও অন্যান্য প্রমাণ নির্ভরযোগ্য হলে।
-
সমাজে এর প্রভাব:
-
অপরাধটি যদি সামাজিক নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে।
-
এটি যদি উদাহরণমূলক শাস্তি হিসেবে প্রয়োজন হয়।
-
অপরাধীর মানসিক অবস্থা ও অতীত আচরণ:
-
অপরাধীর যদি পূর্ব অপরাধের রেকর্ড থাকে।
-
অপরাধী যদি কোনো অনুশোচনা বা সংশোধনের ইঙ্গিত না দেয়।
-
আইন ও বিচারিক নীতি:
-
আদালত বিবেচনা করে যে, এই বিশেষ ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড ছাড়া অন্য কোনো শাস্তি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারবে না।
মৃত্যুদণ্ড এড়ানোর সম্ভাব্য কারণ:
অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার কিছু পরিস্থিতিও থাকতে পারে:
-
অপরাধী যদি অপরাধ করার সময় মানসিক ভারসাম্যহীন থাকে।
-
অপরাধটি যদি তাৎক্ষণিক উত্তেজনার কারণে ঘটে থাকে, এবং এটি পূর্বপরিকল্পিত না হয়।
-
অপরাধীর বয়স যদি অল্প হয় বা যদি সংশোধনযোগ্য প্রমাণিত হয়।
উপসংহার:
বাংলাদেশের দণ্ডবিধি অনুযায়ী, আদালত প্রমাণ এবং পরিস্থিতির ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। এটি সাধারণত এমন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় যেখানে অপরাধটি চরম নিন্দনীয় এবং শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কোনো বিকল্প সমাজ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য যথেষ্ট বলে মনে হয় না।