চুক্তি বাতিল করার জন্য বা অকার্যকর ঘোষণা করার ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত ও আইনি দিক বিবেচনায় নিতে হয়। এগুলো দেশের চুক্তি আইনের ওপর নির্ভর করে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, ১৮৭২ সালের চুক্তি আইন (Contract Act, 1872) অনুযায়ী নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচ্য হতে পারে:
চুক্তি বাতিলের শর্তাবলী:
১. সম্মতির অভাব:
যদি চুক্তি সম্পাদনের সময় কোনো পক্ষের সম্মতি জোরপূর্বক, প্রতারণা, ভুল ব্যাখ্যা, বা প্রভাবিত করার মাধ্যমে নেওয়া হয়, তবে চুক্তি বাতিল করা যেতে পারে।
-
উদাহরণ: একজনকে হুমকি দিয়ে চুক্তি করতে বাধ্য করা।
-
জালিয়াতি বা প্রতারণা:
যদি চুক্তি প্রতারণার ভিত্তিতে সম্পন্ন হয়, তাহলে তা বাতিলযোগ্য।
-
উদাহরণ: ভুল তথ্য প্রদান বা গোপন তথ্য লুকিয়ে রাখা।
-
পরিস্থিতির পরিবর্তন:
যদি এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যা চুক্তি বাস্তবায়ন করা অসম্ভব করে তোলে (impossibility of performance), তবে চুক্তি বাতিল করা যেতে পারে।
-
উদাহরণ: চুক্তির সময়কার শর্ত পূরণের জন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনো বাধা।
-
বেআইনি বা অনৈতিক উদ্দেশ্য:
যদি চুক্তির উদ্দেশ্য বেআইনি বা সমাজের নৈতিকতার পরিপন্থী হয়, তাহলে তা বাতিলযোগ্য।
-
উদাহরণ: মাদক দ্রব্য বিক্রয়ের জন্য চুক্তি।
-
চুক্তির শর্ত ভঙ্গ:
যদি কোনো পক্ষ চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে, তবে অন্য পক্ষ চুক্তি বাতিল করতে পারে।
-
উদাহরণ: নির্ধারিত পণ্য সরবরাহ না করা।
অকার্যকর চুক্তির (Void Agreement) পরিস্থিতি:
১. অযোগ্য পক্ষ:
যদি কোনো পক্ষ চুক্তি সম্পাদনের জন্য আইনি দৃষ্টিতে অযোগ্য হয় (যেমন অপ্রাপ্তবয়স্ক, মানসিকভাবে অস্থির ব্যক্তি), তবে চুক্তি অকার্যকর।
-
প্রকৃত সম্মতির অভাব:
চুক্তি তখনই অকার্যকর হয় যখন এটি প্রতারণা, জালিয়াতি, বা ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে গৃহীত হয়।
-
বেআইনি বা অসম্ভব কার্য:
যদি চুক্তির বস্তু বা শর্ত বেআইনি বা বাস্তবায়ন করা অসম্ভব হয়, তবে তা অকার্যকর।
-
উদাহরণ: একটি চুক্তি যা বলে যে কোনো ব্যক্তি চাঁদে জমি বিক্রি করবে।
-
সময়সীমা অতিক্রম:
যদি চুক্তি বাস্তবায়নের নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যায় এবং পক্ষগুলো তা নবায়ন না করে, তবে তা অকার্যকর হয়ে যায়।
-
অসঙ্গত বা প্রতারণামূলক শর্ত:
যদি চুক্তির শর্তগুলো অসঙ্গত বা পক্ষগুলোর মধ্যে গুরুতর বৈষম্য সৃষ্টি করে।
চুক্তি বাতিল বা অকার্যকর করার প্রক্রিয়া:
-
আইনগত পরামর্শ গ্রহণ: প্রথমে একজন আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করা।
-
লিখিত নোটিশ প্রেরণ: চুক্তির অপর পক্ষকে চুক্তি বাতিল করার লিখিত নোটিশ দেওয়া।
-
আদালতে আবেদন: যদি চুক্তি বাতিল নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়, তাহলে বিষয়টি আদালতে উত্থাপন করা যায়।
আপনার নির্দিষ্ট পরিস্থিতি জানালে আরও বিশদ পরামর্শ দেওয়া সম্ভব।