বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা, দায়িত্ব এবং সীমাবদ্ধতা নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে বর্ণিত। মূল বিষয়গুলো হলো:
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব:
1. প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা গঠন:
রাষ্ট্রপতি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বা সদস্যকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন (অনুচ্ছেদ ৫৬) এবং প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্য নিয়োগ করেন।
2. আইন প্রণয়ন ও অধ্যাদেশ জারি:
রাষ্ট্রপতি সংসদের অনুমোদিত বিলকে স্বাক্ষর করে আইন হিসেবে জারি করেন (অনুচ্ছেদ ৮০)। এছাড়া, সংসদ অধিবেশন না থাকলে জরুরি অবস্থায় অধ্যাদেশ জারি করতে পারেন (অনুচ্ছেদ ৯৩)।
3. সংসদ ভঙ্গ ও অধিবেশন আহ্বান:
রাষ্ট্রপতি সংসদের অধিবেশন আহ্বান, মুলতবি, কিংবা ভঙ্গ করতে পারেন (অনুচ্ছেদ ৭২)।
4. ক্ষমা প্রদান ও শাস্তি লঘু করা:
রাষ্ট্রপতি বিশেষ ক্ষমতার মাধ্যমে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ক্ষমা, দণ্ড লঘু করা বা স্থগিত করতে পারেন (অনুচ্ছেদ ৪৯)।
5. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও চুক্তি:
রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং বিদেশি কূটনীতিকদের পরিচয়পত্র গ্রহণ করেন।
6. জরুরি অবস্থা ঘোষণা:
তিনি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন (অনুচ্ছেদ ১৪১)।
---
ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা:
1. প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শের ওপর নির্ভরশীলতা:
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮(৩) অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি বেশিরভাগ ক্ষমতা প্রয়োগ করেন প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে।
2. কর্তৃত্ব সীমাবদ্ধতা:
রাষ্ট্রপতি একটি সাংবিধানিক পদ এবং নির্বাহী ক্ষমতা কার্যত প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার হাতে থাকে (অনুচ্ছেদ ৫৫)।
3. পুনর্নির্বাচনের সীমাবদ্ধতা:
একই ব্যক্তি পরপর দুই মেয়াদের বেশি রাষ্ট্রপতি হতে পারেন না (অনুচ্ছেদ ৫০)।
4. জবাবদিহিতার অভাব:
রাষ্ট্রপতি তার দায়িত্ব পালনের সময় কোনো আদালতে জবাবদিহি করতে বাধ্য নন (অনুচ্ছেদ ৫১), তবে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে তাকে অপসারণ করা যেতে পারে।
5. অপসারণ প্রক্রিয়া:
রাষ্ট্রপতি যদি সংবিধান লঙ্ঘন করেন বা গুরুতর অসদাচরণ করেন, তাহলে সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে তাকে অপসারণ করা সম্ভব (অনুচ্ছেদ ৫২)।
---
উপসংহার:
রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের একটি সাংবিধানিক পদ। যদিও তিনি দেশের প্রধান রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি, তার কার্যত ক্ষমতা সীমিত এবং প্রধানত প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শের ওপর নির্ভরশীল। সংবিধান রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার চর্চা ও সীমাবদ্ধতা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে, যা গণতান্ত্রিক ভারসাম্য নিশ্চিত করে।