জমজমের পানি: মুসলমানদের কাছে পবিত্রতার প্রতীক
বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মুসলিমের কাছে জমজমের পানি একটি বিশেষ পবিত্রতার প্রতীক। মক্কার পবিত্র মসজিদুল হারামে অবস্থিত এই কূপটি মুসলমানদের বিশ্বাস এবং ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মুসলিমদের পাশাপাশি অনেক অমুসলিমও জমজমের পানিকে পবিত্র বলে মনে করেন। ইসলামী ধর্মমতে, আল্লাহ নিজেই জমজমের পানির পবিত্রতার কথা উল্লেখ করেছেন।
মুসলমান ধর্মের অনুসারীরা জমজম কূপের পানিকে কেন এতো পবিত্র ও গুরুত্তপূর্ণ মনে করে?
গোটা বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ মুসলমান ধর্মের অনুসারী। এই কোটি কোটি মুসলমান এর মনের মধ্যে এই বিশ্বাস আছে যে তারা মনে করে জমজম এর পানি অনেক পবিত্র। একজন মুসলমান হিসেবে আমিও মনে করি যে জমজম এর পানি অনেক পবিত্র। আবার যারা মুসলমান না তাদের অনেকেই মনে করেন যে জমজম এর পানি পবিত্র। আল্লাহ নিজেই বলেছেন যে জমজম এর পানি পবিত্র। সৌদি আরব এর মাক্কায় মাসজিদুল হারাম এর ভেতরে এই জমজম কুপটই অবস্থিত। এটি কাবা ঘরের থেকে মাত্র ২০ মিটার দূরে অবস্থিত। প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ মাক্কায় ফরজ/ ওমরাহ্ হজ করতে যাই। এই হাজীদের মধ্যে প্রায় সবাই জমজম কুপের পানি পান করে থাকেন। এছাড়াও তারা ফিরে আসার সময় সঙ্গে করে এই পানি নিয়ে আসেন। আর আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে ভাগ করে দেন। হজ পালন করে দেশে ফিরে এসেছে আর সঙ্গে করে জমজম এর পানি নিয়ে আসেনি আম্নাণনাঃ প্রায় বিরল। কিন্তু প্রশ্ন হলো মুসলমানরা কেন জমজমের পানিকে এতো গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন? এই পানিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করার কিছু ধর্মীয় ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে। জমজম কূপের পানির ইতিহাসঃ আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগে নবী ইব্রাহিম (আঃ) এর স্ত্রী হাজেরা ও ছেলে ইসমাঈলের পানির তৃষ্ণা মেটানোর জন্য মহান আল্লাহ এই কূপটি সৃষ্টি করেছিলেন। আমাদের পবিত্র ধর্মীও গ্রন্থ আল-কুরআনে সুরা ইব্রাহিম এ এই কূপটি সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। ইমাম বুখারি আব্দুদুল্লাহ ইবনে আব্বাস তার লেখা আল-কুরআন এর পরে এই পৃথিবীতে সবচেয়ে হাদিস সহিহ বুখারি শরিফ এও এই কূপ সম্পর্কে অনেক বর্ণনা দেওয়া হয়াছে। বর্ণনাঃ- বুখারি শরিফ এর বর্ণনাই বলা হয়েছে যে , ইব্রাহিম (আঃ) মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে তার স্ত্রী হাজেরা এবং ছেলে ইসমাঈল কে মাক্কার কাবা শরীফের ( তখন কাবা ঘর ছিল না, ছিলো শুধু জনশূন্য মরুভুমি ) কাছে নিয়ে যান । সেখানে কনো লোকালয় ছিল না। ফলে সেখানে কোনো পানির বাবস্থা ছিল না। এমতাবস্থায় হযরত ইব্রাহিম (আঃ) তাদের ওই মরুভুমির মাঝে কিছু খাবার আর পানি রেখে চলে যাচ্ছিলেন। তখন বিবি হাজেরা ইব্রাহিম (আঃ) কে প্রশ্ন করলেন যে " আপনি আমাদের কে এই জনশূন্য স্থানে একা রেখে কোথায় চলে যাচ্ছেন ?" তখন হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কিছু না বলে চলে যাচ্ছিলেন। তখন আবার বিবি হাজেরা আবার প্রশ্ন করলেন যে " এটা কো আল্লাহ র নির্দেশ? " তখন ইব্রাহিম (আঃ) উত্তর দিলেন যে হ্যাঁ । তখন হাজেরা তাঁকে যাওয়ার জন্য সম্মতি দিলেন। কিছুদিন পর তাদের খাবার আর পানি শেষ হয়ে গেল। তখন শিশু ইসমাইল তৃষ্ণা তে কাঁদছিলেন। ছেলের এই অবস্থা দেখে মা সাফা ও মারওয়া পর্বত এর মাঝে পানির সন্ধানে দৌড়াতে লাগলেন (৭ বার)। এই সময় মহান আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা জিব্রাঈল (আঃ) আসেন এবং তার পায়ের আঘাতে একটি পানির ফোয়ারা তৈরি হয়। সেটাই এখন বর্তমানের জমজম কূপ। বিবি হাজেরা এবং তার ছেলে ইসমাইল এই জমজম কূপ এর পানি আর খেজুর গাছের খেজুর খেয়ে বেচে ছিলেন। মুসলমানদের কাছে এটি এত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ কি? আসলে মহান আল্লাহ তায়ালে হাজেরা কে যে এই সুনসান মরুভুমিতে একা একা এমনি এমনি রেখে যাননি। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল যে মানুষ এখানে বসতি গড়ে তোলে। এরপর এখানে ধিরে ধিরে জনবসতি গড়ে ওঠে। এই কূপটাকে খনন করা হয়। পরে এখানে কাবা শরিফ নির্মাণ করা হয়। তার আরও পরে মানুষকে হজ করার জন্য আহবান জানানো হয়। অর্থাৎ এই জমজম কুপকে ঘিরেই এখন এর হজ এর শুরু হয়েছিল। এছাড়াও আরও কিছু বিশ্বাস এর কারনে মানুষ এই কূপ টাকে এত গুরুত্ব দেয়। পরিশেষ এ একটা কথাই বলতে চায় যে , আমি কোনো ইমাম বা হাফেজ না। তাই আমি যতটুকু জানি ততটকু বলেছি। তাই যদি কোন ভুল হয়ে গেলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। এবং পারলে কমেন্টে ভুলটা বলে যাবেন। পরে ঠিক করে
জমজমের ইতিহাস
আজ থেকে হাজার হাজার বছর আগে মহানবী ইব্রাহিম (আঃ)-এর স্ত্রী হাজেরা ও পুত্র ইসমাঈলের জীবন রক্ষার্থে আল্লাহ এই কূপের সৃষ্টি করেন। কোরআনের সুরা ইবরাহিম এবং সহিহ বুখারি শরিফসহ বিভিন্ন হাদিসে এর উল্লেখ রয়েছে।
হযরত ইব্রাহিম (আঃ) আল্লাহর আদেশে তার স্ত্রী হাজেরা ও পুত্র ইসমাঈলকে মক্কার জনমানবহীন মরুভূমিতে রেখে যান। সেই সময় কোনো পানির উৎস না থাকায় হাজেরা সন্তান ইসমাঈলের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে পানির সন্ধানে দৌড়াতে থাকেন। সাতবার দৌড়ানোর পর, আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা জিব্রাঈল (আঃ) হাজির হন এবং তার পায়ের আঘাতে জমজম কূপের উৎপত্তি ঘটে। এই কূপের পানি দিয়ে হাজেরা ও ইসমাঈল তাদের জীবন রক্ষা করেন এবং পরবর্তীতে এখানেই একটি জনপদ গড়ে ওঠে।
জমজমের গুরুত্ব
১. ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ: জমজম কূপটি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের নিদর্শন। মুসলিমদের কাছে এটি শুধু একটি পানির উৎস নয়, বরং এটি বিশ্বাস এবং ঈমানের একটি শক্তিশালী প্রতীক। ২. হজ ও ওমরাহর অংশ: প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মুসলিম হজ বা ওমরাহ পালনের সময় জমজমের পানি পান করেন এবং তা নিজেদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যান। এটি আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে বিতরণের একটি পবিত্র প্রথাও। ৩. ঐতিহাসিক গুরুত্ব: জমজম কূপ কাবা শরিফের কাছাকাছি অবস্থিত, যা ইসলামের প্রাথমিক ইতিহাস এবং নবী ইব্রাহিম (আঃ)-এর আত্মত্যাগের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।