করোনাকালীন সরকারি চাকরিজীবীরা বাড়িতে বসে বসে বেতন বা ভাতাদি পেয়েছেন এই বিষয়টি ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে বোঝার জন্য প্রথমে কিছু মূল নীতির দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।
ইসলামি দৃষ্টিতে বেতন বা উপার্জন:
ইসলামে, মানুষ উপার্জনের জন্য যে কোনো বৈধ কাজ করলে তার জন্য বেতন বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা বৈধ। তবে, এটি সঠিকভাবে এবং আইন অনুযায়ী হতে হবে। ইসলাম কেবল বৈধ উপার্জনই অনুমোদন করে, যেমন অবৈধ (হারাম) উপার্জন বা যে কোনো প্রতারণামূলক উপায় (যেমন সুদ, মিথ্যা বিবৃতি, অপকর্ম ইত্যাদি) থেকে দূরে থাকতে উৎসাহিত করে।
করোনাকালীন সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে:
করোনাকালে অনেক চাকরিজীবী বাড়িতে বসে কাজ করেছেন, বা তাদের কাজের পরিবেশ এবং পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছিল। সরকার বা প্রতিষ্ঠান সাধারণত কর্মীদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য তাদের কাজের শর্ত পরিবর্তন করেছে এবং কিছু কর্মীকে বাড়ি থেকে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে। তবে, এই পরিস্থিতি যদি সঠিকভাবে পরিশ্রমের বিপরীতে পারিশ্রমিক দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে তা বৈধ হতে পারে।
ইসলামী দৃষ্টিকোণ:
1. বেতন ও কাজের মধ্যে সম্পর্ক:
ইসলাম অনুযায়ী, বেতন বা পারিশ্রমিক শুধুমাত্র তখনই গ্রহণযোগ্য, যখন ব্যক্তি তার কাজ যথাযথভাবে করেছে। যদি কোনো সরকারি কর্মী তার দায়িত্ব পালন না করে বা কাজ না করে, তবে তার জন্য বেতন গ্রহণ করা ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধ হবে না।
2. বাড়িতে বসে কাজ:
করোনাকালে, অনেক প্রতিষ্ঠান বাড়িতে বসে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে। যদি এই কাজগুলো নির্দিষ্ট সময় ও সঠিক পরিমাণে সম্পন্ন হয় এবং কর্মী যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেন, তবে তার জন্য বেতন গ্রহণ করা বৈধ হবে।
তবে, যদি কেউ বাড়িতে বসে কোনো কাজ না করেন এবং শুধুমাত্র বেতন গ্রহণ করেন, তখন এটি অন্যায় এবং অবৈধ হতে পারে। কারণ, ইসলাম কাজের বিনিময়ে বেতন দেয়ার পক্ষে, কিন্তু কাজ না করলে বেতন গ্রহণ করা অধিকারবিহীন এবং অবৈধ হতে পারে।
3. অপারগতা বা ঝুঁকি:
যদি কোনো কর্মী শারীরিকভাবে অসুস্থ বা করোনাভাইরাস এর কারণে কাজে যোগ দিতে না পারেন, এবং সরকার তার স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য তাকে বেতন বা ভাতাদি প্রদান করছে, তাহলে এটি বৈধ হতে পারে, কারণ এটি সঠিক মানবিক কারণে দেওয়া হচ্ছে।
ইসলাম মানবিক কারণে সহানুভূতি ও সহায়তা প্রদানের পক্ষে। তাই যদি কোনো কর্মী করোনা আক্রান্ত হন বা তার কাজ করার শর্ত পরিবর্তিত হয়ে থাকে, তবে তার বেতন বা ভাতা প্রদান করা ইসলামে গ্রহণযোগ্য হতে পারে, কারণ এখানে মূল উদ্দেশ্য কর্মীকে সাহায্য করা এবং তার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা।
উপসংহার:
করোনাকালীন সরকারি চাকরিজীবীরা বাড়িতে বসে বেতন বা ভাতা পেলে, ইসলামের দৃষ্টিতে এটি তথ্য ও পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে বৈধ হতে পারে। যদি কর্মী তার কাজ যথাযথভাবে না করেন এবং কোনো প্রকার পরিশ্রমের বিনিময়ে বেতন গ্রহণ করেন, তবে এটি অবৈধ হতে পারে। তবে, যদি কর্মী শারীরিকভাবে অসুস্থ হন বা পরিস্থিতি বিশেষ কারণে তিনি কাজ করতে না পারেন এবং সেই ক্ষেত্রে সরকার তার মৌলিক অধিকার (যেমন বেতন) নিশ্চিত করে, তবে এটি ইসলামে বৈধ হবে।