নফস শব্দটি আরবি। নফস শব্দের অর্থ প্রাণ, আত্মা। যা সকল প্রাণির দেহেই বিরাজমান। নফস হলো সেই অলৌকিক বস্তু, যা মানুষের দেহে ফুঁ দিয়ে প্রাণের সঞ্চার করা হয়। অথবা নফস সেটাই যা আল্লাহ মানব দেহে ফুঁকে দিয়েছেন। মৃত্যুর সময় যা দেহ থেকে বেরিয়ে যায়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলছেনঃ- কুল্লু নাফসিন জাইকাতুল মউত। অর্থাৎ প্রত্যেক নফস তথা প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। (সূরা: আলে-ইমরানঃ-১৮৫)।
কোরআনের বর্ণনা থেকে পাই নফস তিন প্রকারঃ-
১। নফসে আম্মারাহ।
২। নফসে লাওওয়ামাহ।
৩। নফসে মুত্বমাইন্নাহ।
১। নফসে আম্মারাহ: এর স্বভাবগত চাহিদা হলো মন্দকামনা, শয়তানের অনুসরণ-কু-প্রবৃত্তির বাসনা, চরিতার্থ করা। যাতে করে হারাম কাজ করা তার জন্য সহজ হয়। যেমন: আল্লাহ তায়ালা বলেন, وَمَا أُبَرِّىءُ نَفْسِي إِنَّ النَّفْسَ لأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلاَّ مَا رَحِمَ رَبِّيَ إِنَّ رَبِّي غَفُورٌ رَّحِيمٌ- অর্থ: ‘আমি নিজেকে নির্দোষ বলি না। নিশ্চয় মানুষের মন মন্দ কর্মপ্রবণ কিন্তু সে নয়-আমার পালনকর্তা যার প্রতি অনুগ্রহ করেন। নিশ্চয় আমার পালনকর্তা ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সূরা: ইউসুফ, আয়াত: ৫৩)।
২। নফসে লাওওয়ামাহ বা ধিক্কার দানকারী আত্না: এ প্রকারের আত্নায় ও মন্দ-শয়তানি কুমন্ত্রনা, কু-প্রবৃত্তির বাসনা ইত্যাদি জিনিসের উদয় হয়। তবে পরক্ষনেই এই নাফসের অধীকারী ব্যক্তি তার কৃত কর্মের জন্য নিজেকে অধিক ধিক্কার দেয়, ও লজ্জাবোধ করে। কারণ তাতে সামান্যতম হলেও ঈমানের জ্যোতি বিদ্যমান। যেমন: আল্লাহ তায়ালা বলেন, لَا أُقْسِمُ بِيَوْمِ الْقِيَامَةِ- وَلَا أُقْسِمُ بِالنَّفْسِ اللَّوَّامَةِ- অর্থ: ‘আমি শপথ করি কেয়ামত দিবসের। আরো শপথ করি সেই আত্নার যে নিজেকে ধিক্কার দেয়।’ (সূরা: আল-কিয়ামাহ, আয়াত: ১-২)।
৩। নফসে মুত্বমাইন্নাহ বা প্রশান্ত আত্না: এই প্রকারের আত্না আল্লাহর আনুগত্য ও জিকির দ্বারা মনে প্রশান্তি অনুভব করে, এবং সব প্রকার আনুগত্যের কর্মকাণ্ড সম্পাদন করে ঈমানের পরিপূর্ণ স্বাদ লাভ করে এবং সমস্ত অন্যায় থেকে সে পরিপূর্ণ রুপে মুক্ত থাকে। যেমন: আল্লাহ তায়ালা বলেন, يَا أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ- ارْجِعِي إِلَى رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً- فَادْخُلِي فِي عِبَادِي- وَادْخُلِي جَنَّتِي- অর্থ: ‘হে প্রশান্ত আত্না- তুমি প্রশান্ত চিত্তে তোমার পালনকর্তার দিকে ফিরে চলো। অতঃপর আমার বান্দাদের অর্ন্তভুক্ত হয়ে যাও এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (সূরা: ফজর, আয়াত: ২৭-৩০)।