কুরআনে পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের (যেমন তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল ইত্যাদি) বিষয়ে বিভিন্ন স্থানে আলোচনা করা হয়েছে। কুরআনের বক্তব্য অনুসারে, এগুলোও আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিলকৃত এবং সেগুলোর মূল উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে সঠিক পথ দেখানো। তবে পরবর্তীতে মানুষ সেগুলোর মধ্যে পরিবর্তন ও বিকৃতির মাধ্যমে সেগুলোর মূল বার্তা নষ্ট করেছে। কুরআনে এই বিষয়গুলো বিভিন্নভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। নিম্নে সংশ্লিষ্ট কিছু দিক তুলে ধরা হলো:
১. পূর্ববর্তী কিতাবগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিলকৃত
কুরআনে বলা হয়েছে, তাওরাত, যাবুর ও ইঞ্জিলসহ অন্যান্য কিতাব আল্লাহর কাছ থেকে অবতীর্ণ হয়েছিল। এগুলো মানুষের হেদায়াতের জন্য ছিল।
আয়াত:
-
"তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন সত্যসহ, যা এর পূর্বের কিতাবসমূহের সত্যতা নিশ্চিত করে এবং তাওরাত ও ইঞ্জিল তিনি নাযিল করেছেন।"
(সুরা আলে ইমরান, ৩:৩)
২. কিতাবগুলোর উদ্দেশ্য ছিল সঠিক পথে পরিচালিত করা
প্রতিটি কিতাবই ছিল সঠিক পথের দিশারি। মানুষকে ঈমান, ন্যায়নীতি এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের শিক্ষা দেওয়াই ছিল সেগুলোর মূল উদ্দেশ্য।
আয়াত:
-
"নিশ্চয়ই আমরা তাওরাত নাযিল করেছি, যাতে ছিল হেদায়াত ও নূর।"
(সুরা মায়িদা, ৫:৪৪)
-
"আমরা দাউদের প্রতি দিয়েছিলাম যাবুর।"
(সুরা আন-নিসা, ৪:১৬৩)
৩. পূর্ববর্তী কিতাবগুলো বিকৃত করা হয়েছে
কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে যে পূর্ববর্তী কিতাবগুলোর কিছু অংশ পরিবর্তন ও বিকৃতি করা হয়েছে। সেগুলো আর তাদের মূল রূপে অবশিষ্ট নেই।
আয়াত:
-
"তোমরা কি আশা কর যে, তারা তোমাদের কথা মেনে নেবে? অথচ তাদের মধ্যে একদল ছিল, যারা আল্লাহর বাণী শুনে তা বুঝে নেওয়ার পরও ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করেছে।"
(সুরা বাকারা, ২:৭৫)
-
"হায় তাদের জন্য, যারা নিজেদের হাত দিয়ে কিতাব লেখে এবং বলে, 'এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে,' যেন এর মাধ্যমে তারা সামান্য অর্থ উপার্জন করতে পারে।"
(সুরা বাকারা, ২:৭৯)
৪. কুরআন পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী
কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এটি পূর্ববর্তী কিতাবগুলোর সত্যতা প্রমাণ করে এবং তাদের পরিপূরক।
আয়াত:
-
"এই কুরআন পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যতা নিশ্চিতকারী।"
(সুরা ইউনুস, ১০:৩৭)
-
"আমরা তোমার প্রতি এই কিতাব অবতীর্ণ করেছি সত্যসহ, যা তাদের পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যতা নিশ্চিত করে এবং তার ওপর সাক্ষীস্বরূপ।"
(সুরা মায়িদা, ৫:৪৮)
৫. নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী
কুরআনে বলা হয়েছে, পূর্ববর্তী কিতাবগুলোতে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল।
আয়াত:
-
"যারা রাসূল, উম্মি নবীর অনুসরণ করে, যার কথা তারা তাদের কাছে থাকা তাওরাত ও ইঞ্জিলে লেখা পায়।"
(সুরা আরাফ, ৭:১৫৭)
৬. পূর্ববর্তী কিতাব অনুসারীদের প্রতি আহ্বান
কুরআনে আহ্বান জানানো হয়েছে যে, তারা যেন কুরআন ও ইসলামের প্রতি ঈমান আনে, কারণ এটি তাদের কিতাবের সত্যতা নিশ্চিত করে।
আয়াত:
-
"হে কিতাবধারীরা! তোমরা এমন কোনো বিষয়ের অযথা বিরোধিতা করো না, যা তোমাদের কাছে সত্য এসেছে।"
(সুরা মায়িদা, ৫:৫৯)
সারসংক্ষেপ:
পূর্ববর্তী কিতাবসমূহ ছিল আল্লাহর নাজিলকৃত এবং সেগুলো মানুষের জন্য হেদায়াতের উৎস। তবে বিকৃতির কারণে সেগুলোর মূল বার্তা হারিয়ে গেছে। কুরআন পূর্ববর্তী কিতাবগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করে এবং তাদের মধ্যে যে সঠিক বার্তা ছিল, তা পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করে।