করোনা মহামারীর সময় জাতিসংঘ (United Nations) এবং তার বিভিন্ন সংস্থা বিশ্বব্যাপী টিকাদান কর্মসূচি কার্যকর করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। জাতিসংঘের নেতৃত্বে নেওয়া প্রধান পদক্ষেপগুলো হলো:
১. COVAX উদ্যোগ:
COVAX হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), Gavi (Vaccine Alliance), এবং CEPI (Coalition for Epidemic Preparedness Innovations)-এর যৌথ উদ্যোগ। এর লক্ষ্য:
-
সমতার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন বিতরণ:
উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সমানভাবে ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়া।
-
টিকা সরবরাহ:
২০২১ সালের মধ্যে ২০০ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহের লক্ষ্য নির্ধারণ।
-
স্বল্প আয়ের দেশগুলোকে সহায়তা:
কম আয়ের দেশগুলো যাতে বিনামূল্যে বা স্বল্প খরচে টিকা পেতে পারে, তা নিশ্চিত করা।
২. WHO-এর ভূমিকা:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জাতিসংঘের একটি শাখা, যা করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে:
-
টিকা অনুমোদন:
ভ্যাকসিনের সুরক্ষা ও কার্যকারিতা পরীক্ষা করে জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন।
-
নির্দেশিকা প্রদান:
ভ্যাকসিনের সঠিক সংরক্ষণ, বিতরণ এবং ব্যবহারের জন্য গাইডলাইন প্রদান।
-
টিকা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা দূর করা:
ভ্যাকসিন নিয়ে গুজব এবং ভুল তথ্য মোকাবিলায় জনসচেতনতা তৈরি।
৩. UNDP এবং UNICEF-এর সহযোগিতা:
-
UNICEF (United Nations Children’s Fund):
-
করোনা ভ্যাকসিন পরিবহন ও বিতরণে UNICEF গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
-
সরবরাহ চেইন নিশ্চিত করতে, বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করেছে।
-
UNDP (United Nations Development Programme):
-
ভ্যাকসিন বিতরণে দরিদ্র দেশগুলোকে অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান।
৪. আন্তর্জাতিক অর্থায়ন:
জাতিসংঘ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অর্থায়ন সংগ্রহ করেছে, যেমন:
-
GAVI এবং অন্যান্য সংস্থার মাধ্যমে স্বল্প আয়ের দেশগুলোতে বিনামূল্যে টিকা বিতরণ।
-
টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনায় সরঞ্জাম এবং প্রশিক্ষণের জন্য তহবিল সরবরাহ।
৫. টিকাদান সমতা নিয়ে প্রচারণা:
জাতিসংঘ টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে বারবার জোর দিয়েছে যে,
-
উন্নত দেশগুলো যেন অতিরিক্ত ভ্যাকসিন মজুদ না করে।
-
দরিদ্র দেশগুলো যাতে টিকাদান কর্মসূচি থেকে পিছিয়ে না থাকে।
৬. "Global Vaccine Access" প্রচেষ্টা:
জাতিসংঘ এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলো বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিনের ন্যায্য প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার জন্য "No One is Safe Until Everyone is Safe" স্লোগানকে সামনে রেখে কাজ করেছে।
উপসংহার:
জাতিসংঘের এসব পদক্ষেপের লক্ষ্য ছিল বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা, ভ্যাকসিনের সমতা প্রতিষ্ঠা, এবং দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ভ্যাকসিন সহজলভ্য করা। এই প্রচেষ্টাগুলো করোনা মহামারী মোকাবিলায় একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত।