করোনা ভাইরাস (Coronavirus) মূলত একটি RNA ভাইরাস যা মানুষের এবং অন্যান্য প্রাণীর শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এটি সার্স-কোভ-২ (SARS-CoV-2) ভাইরাসের মাধ্যমে কোভিড-১৯ (COVID-19) রোগ সৃষ্টি করে, যা ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে।
করোনা ভাইরাসের কারণ
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণ হলো ভাইরাসটির মানুষের শরীরে প্রবেশ এবং বিস্তার। এর বিস্তারিত কারণসমূহ নিচে দেওয়া হলো:
১. ভাইরাসের উৎস
-
প্রাকৃতিক উৎস:
-
করোনা ভাইরাসটি সাধারণত বাদুড় (Bats) থেকে উৎপন্ন বলে ধারণা করা হয়। বাদুড় থেকে এটি প্যাঙ্গোলিন বা অন্য কোনো মধ্যবর্তী প্রাণীর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন।
-
প্রথম সংক্রমণের ঘটনা চীন-এর উহান শহরে ২০১৯ সালে শনাক্ত হয়।
২. সংক্রমণের প্রক্রিয়া
করোনা ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এবং শ্বাসতন্ত্রের কোষগুলিকে সংক্রমিত করে।
-
স্পাইক প্রোটিন (Spike Protein):
-
ভাইরাসটির বাইরের স্পাইক প্রোটিনটি মানুষের কোষের ACE2 রিসেপ্টর-এর সাথে সংযুক্ত হয়।
-
এই সংযোগের মাধ্যমে ভাইরাসটি কোষে প্রবেশ করে এবং নিজেকে প্রতিলিপি (replicate) করে।
৩. সংক্রমণ ছড়ানোর কারণ
করোনা ভাইরাস প্রধানত মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়। এর কয়েকটি প্রধান মাধ্যম:
-
ড্রপলেট (Droplets):
-
সংক্রামিত ব্যক্তির কাশি, হাঁচি, বা কথা বলার মাধ্যমে ড্রপলেটের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ায়।
-
সংস্পর্শ:
-
সংক্রামিত কোনো পৃষ্ঠ বা বস্তু স্পর্শ করার পর মুখ, নাক, বা চোখে হাত দিলে সংক্রমণ হতে পারে।
-
এয়ারবর্ন (Airborne):
-
ভাইরাসটি বাতাসের অতিক্ষুদ্র কণার মাধ্যমে কিছুক্ষণের জন্য বাতাসে ভেসে থাকতে পারে।
-
ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ:
-
আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি থাকার ফলে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৪. করোনা ভাইরাসের ঝুঁকিপূর্ণ কারণসমূহ
-
মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার দুর্বলতা।
-
ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকা।
-
মাস্ক না পরা ও স্বাস্থ্যবিধি না মানা।
-
অপরিচ্ছন্ন হাত দিয়ে মুখ, নাক, বা চোখ স্পর্শ করা।
উপসর্গ ও প্রভাব
-
উপসর্গ: জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, ক্লান্তি, স্বাদ বা গন্ধ হারানো।
-
গুরুতর প্রভাব: নিউমোনিয়া, মাল্টি-অর্গান ফেইলিউর, মৃত্যুর ঝুঁকি।
সংক্রমণ প্রতিরোধে করণীয়
-
নিয়মিত হাত ধোয়া।
-
মাস্ক পরা।
-
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা।
-
টিকা গ্রহণ।
-
জনসমাগম এড়ানো।
করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মহামারির বিস্তার রোধে বিজ্ঞানীরা দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। তবে সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই প্রধান প্রতিরোধমূলক উপায়।