কর্মসহায়ক গবেষণা (Applied Research) মূলত বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধান করার জন্য কাজ করে। এটি বিভিন্ন ক্ষেত্রের সমস্যার সমাধান এবং প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি বা পদ্ধতির উন্নয়নে সহায়ক। কর্মসহায়ক গবেষণা সফলভাবে সম্পন্ন করতে কিছু নির্দিষ্ট কাজ ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। নিচে কর্মসহায়ক গবেষণার করণীয় কাজসমূহ উল্লেখ করা হলো:
১. সমস্যা চিহ্নিতকরণ:
গবেষণার প্রথম ধাপ হচ্ছে সমস্যার স্পষ্ট চিহ্নিতকরণ। কোন সমস্যা সমাধান করতে হবে বা কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে, তা সঠিকভাবে নির্ধারণ করা জরুরি।
এটি প্রায়ই একটি বাস্তবিক সমস্যা হতে পারে, যেমন কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নতুন পদ্ধতি, স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নতি, বা পরিবেশের সুরক্ষা।
২. গবেষণার উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য নির্ধারণ:
গবেষণার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করতে হবে। এটি কীভাবে সমস্যার সমাধান করবে বা কী ফলাফল আশা করা যায় তা নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
লক্ষ্যগুলি পরিমাপযোগ্য এবং বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত, যেন গবেষণার শেষে কার্যকরী ফলাফল পাওয়া যায়।
৩. তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ:
গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় ডেটা সংগ্রহ করা। এটি হতে পারে প্রাথমিক (প্রথমিক) বা মাধ্যমিক (দ্বিতীয়ক) তথ্য, যা বাস্তব ক্ষেত্রে প্রভাবিত করে।
সঠিক ডেটা বিশ্লেষণ করা এবং তা সমস্যা সমাধানে কার্যকরী ব্যবহার করা। গাণিতিক মডেল, পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪. সম্ভাব্য সমাধান বা প্রযুক্তি উদ্ভাবন:
গবেষণার মাধ্যমে এমন সমাধান বা প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা যা সমস্যার বাস্তবিক সমাধান দেয়।
উদাহরণস্বরূপ, কৃষিতে নতুন কৃষি প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য খাতে নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি, পরিবেশ রক্ষা সংক্রান্ত নতুন প্রযুক্তি ইত্যাদি।
৫. পরীক্ষণ এবং প্রয়োগযোগ্যতা যাচাই:
উদ্ভাবিত সমাধান বা প্রযুক্তি পরীক্ষণ করা এবং তার প্রয়োগযোগ্যতা যাচাই করা। এটি ছোট আকারে পাইলট পরীক্ষা হতে পারে, যাতে ফলাফলগুলি পরীক্ষা করা যায়।
ফলাফল যদি কার্যকর হয়, তবে তার প্রভাব এবং কার্যকারিতা আরও বড় আকারে বাস্তবায়ন করা যায়।
৬. পুনঃমূল্যায়ন এবং সমন্বয়:
পরীক্ষণের ফলাফল অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরিবর্তন বা সমন্বয় করা। যদি কোনো প্রযুক্তি বা পদ্ধতি কার্যকর না হয়, তাহলে তা পুনরায় মূল্যায়ন করা উচিত।
এই প্রক্রিয়াটি গবেষণার ফলাফলকে আরও সুসংহত ও উপযুক্ত করে তোলে।
৭. গবেষণা ফলাফল শেয়ার করা:
গবেষণার ফলাফল সম্প্রদায়, সরকার, শিল্প বা সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সাথে ভাগ করা। এটি নতুন প্রযুক্তির বা সমাধানের ব্যাপক বাস্তবায়ন এবং প্রয়োগে সহায়ক হতে পারে।
গবেষণা ফলাফলগুলো সাধারণ মানুষের জন্য উপলব্ধ করা, যাতে তা বাস্তব জীবনে সহজে প্রয়োগ করা যায়।
৮. অর্থনৈতিক এবং সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন:
গবেষণার সমাধান বা প্রযুক্তির অর্থনৈতিক এবং সামাজিক প্রভাব বিশ্লেষণ করা। এটি নিশ্চিত করবে যে সমাধানটি শুধু কার্যকরী নয়, বরং তা সাশ্রয়ী এবং সবার জন্য উপকারী।
সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকেও তার প্রভাব যাচাই করা উচিত, যেমন জনগণের জীবনমান উন্নয়ন বা পরিবেশে ইতিবাচক পরিবর্তন।
৯. সহযোগিতা এবং অংশীদারিত্ব:
বিভিন্ন গবেষক, প্রতিষ্ঠান, সরকার, এবং শিল্পের অংশীদারিত্বের মাধ্যমে গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এটা গবেষণার ফলাফল দ্রুত বাস্তবায়ন এবং প্রয়োগে সহায়তা করতে পারে।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বা অন্য দেশের সাথে অংশীদারিত্ব হতে পারে, বিশেষ করে যেখানে বৈশ্বিক সমস্যার সমাধান প্রয়োজন (যেমন জলবায়ু পরিবর্তন বা মহামারি ইত্যাদি)।
১০. দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল পর্যবেক্ষণ:
সমাধান বা প্রযুক্তির বাস্তবায়নের পর তার দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল পর্যবেক্ষণ করা। এটি নিশ্চিত করবে যে সমাধানটি দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর এবং সঠিকভাবে কাজ করছে।
সমস্যার পুনরাবৃত্তি ঘটলে বা নতুন কোনো চ্যালেঞ্জ দেখা দিলে তাও দ্রুত সমাধান করা উচিত।
১১. নতুন চিন্তা এবং উদ্ভাবন:
কার্যকরী গবেষণার মাধ্যমে নতুন চিন্তা এবং উদ্ভাবন তৈরি করা। এটি সমস্যার নতুন দৃষ্টিকোণ এবং সমাধান আনতে সহায়ক হতে পারে।
নতুন প্রযুক্তি বা পদ্ধতির উদ্ভাবন সামাজিক, অর্থনৈতিক বা পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
এই কাজগুলোর মাধ্যমে কর্মসহায়ক গবেষণা সমাজে বাস্তবিক পরিবর্তন এবং সমস্যার সমাধানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।