আমেরিকা প্রবাসী এক বাঙালি বিজ্ঞানী। নিজেকে বলেন জৈব প্রকৌশলী (বায়ো-ইঞ্জিনিয়ার)। ইনি বছর কয়েক আগেই সারা বিশ্ব জুড়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন, বিশ্বে প্রথম কৃত্রিম বৃক্ক আবিষ্কার করে। ঢাকার বিখ্যাত চিকিৎসক অশোক নাথ রায়ের পুত্র শুভ। জন্ম ঢাকায়, ১৯৬৯ সালের ১০ নভেম্বর। আদি বাড়ি ছিল চট্টগ্রাম জেলার রোসাংগিরিতে। ছোটবেলা থেকেই শুভ ছিলেন কল্পনাপ্রবণ। পাঠ্যপুস্তকের বাইরের বিষয় তাঁকে বেশি আকর্ষণ করত। ঢাকার একটি নার্সারি স্কুলে ভর্তিও হয়েছিলেন।
কিন্তু যখন শুভর বয়স পাঁচ, চিকিৎসক অশোক নাথ রায়কে কর্মসূত্রে চলে যেতে হয়েছিল আফ্রিকার উগান্ডায়। বাংলাদেশ ছেড়ে ছোট্ট শুভ ভর্তি হয়েছিলেন উগান্ডার জিনজা সিনিয়র সেকেন্ডারি বিদ্যালয়ে। সেখানেই বিদ্যালয় জীবন শেষ করে, আমেরিকা পাড়ি দেন শুভ।
ওহাইওর মাউন্ট ইউনিয়ন কলেজ থেকে একই সঙ্গে পরিগণক বিজ্ঞান (কম্পিউটার বিজ্ঞান), পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতে স্নাতক হন মেধাবী শুভ।
এরপর ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৯৫ সালে বৈদ্যুতিক প্রকৌশল (ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং) ও ফলিত পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর উপাধি (মাস্টার্স ডিগ্রি) অর্জন করেন। বৈদ্যুতিক প্রকৌশল ও পরিগণক বিজ্ঞানে (কম্পিউটার) পি.এইচ.ডি করেন ২০০১ সালে।
১৯৯৮ সালে ওহাইওর ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের জৈব তড়িতানু যান্ত্রিক ব্যবস্থা (বায়ো মাইক্রো ইলেক্ট্রো মেকানিক্যাল সিস্টেমস) গবেষণাগারে (ল্যাবরেটরির) সহ অধিকর্তার (অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর) পদে যোগ দেন ড. শুভ রায়। মানুষের শরীরের অপার রহস্য তাঁকে তখন থেকেই ভাবাতে শুরু করে।
চাকরির সঙ্গে সঙ্গে ড. শুভ রায় জৈবচিকিৎসা প্রকৌশল (বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং) পড়াতে থাকেন ক্লিভল্যান্ড স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। বৈদ্যুতিক প্রকৌশল (ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং) ও পরিগণক বিজ্ঞান (কম্পিউটার সায়েন্স) পড়াতে থাকেন কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ বিশ্ববিদ্যালয়ে।
২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আণবিক ঔষধবিজ্ঞান (মলিকুলার মেডিসিন) পড়িয়েছিলেন লার্নার কলেজ অব মেডিসিনে।
এরপর, ২০০৯ সালে তিনি ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের মূত্রনালী (নেফ্রোলজি) বিভাগের দায়িত্বে আসেন। তখনই তিনি নিজের চোখে, খুব কাছ থেকে দেখেছেন বৃক্কের অসুখে ভুগতে থাকা মানুষদের।… জীবন ও মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা কিছু মানুষের মুখ তাঁকে রাতদিন চিন্তামগ্ন রাখত। দিনের শেষে ঘরে ফিরে কোনও কাজে মন বসাতে পারতেন না তিনি।
সারাক্ষণ ভাবতেন কীভাবে সারা বিশ্বে বৃক্কের অসুখে ভোগা মানুষগুলির মুখে হাসি ফোটান যায়। কীভাবে আরও কিছুদিন তাদের আয়ু বাড়িয়ে দেওয়া যায়। রাতের পর রাত জেগে মানুষের বৃক্কের সূক্ষাতিসূক্ষ্ম অংশগুলি ও তাদের কাজ নিয়ে পড়াশুনা করতেন মানুষটি।
মানুষের কল্যাণে শুরু করেছিলেন এক দুঃসাহসিক প্রচেষ্টা। জীববিজ্ঞানী (বায়ো-ইঞ্জিনিয়ার) ড. শুভ রায়, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়াতে জীববিজ্ঞান এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান (বায়োইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড থেরাপিউটিক সায়েন্স) পড়িয়ে আসছিলেন ২০০৮ সাল থেকেই। সেখানেই শুরু করলেন এক দুঃসাহসিক প্রচেষ্টা।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ জন অধ্যাপক ও গবেষককে নিয়ে শুরু করেছিলেন "কৃত্রিম বৃক্ক" বা (Bioartificial Kidney) তৈরির কাজ। আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগে। গবেষক দলে ছিলেন বিশিষ্ট মূত্রনালী বিশেষজ্ঞ (নেফ্রোলজিস্ট) উইলিয়াম এফ ফিসেল।
দিনের পর দিন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলেছিল নিরলস গবেষণা। একদিন, ড. শুভ রায় আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন Silicon Nanopore Membrane (SNM)। এটি সিলিকন-নির্মিত সূক্ষ্ম ছিদ্রযুক্ত একটি পর্দা, যা রক্তকে নিখুঁতভাবে ছেঁকে ফেলতে সক্ষম। বাকিটা ইতিহাস।
৪১ জন নাছোড়বান্দা বিজ্ঞানীর নিরলস পরিশ্রমে তৈরি হয়ে গেল কৃত্রিম বৃক্ক।