ডার্ক ওয়েব হলো ইন্টারনেটের একটি গোপন ও এনক্রিপ্টেড অংশ, যা সাধারণ সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে সরাসরি অ্যাক্সেস করা সম্ভব নয়। এটি টর (Tor), আই২পি (I2P), বা ফ্রিনেটের মতো বিশেষ সফটওয়্যার, কনফিগারেশন, বা অনুমোদন প্রক্রিয়া ব্যবহার করে প্রবেশযোগ্য হয়। ডার্ক ওয়েব ইন্টারনেটের এমন একটি অংশ যা গোপনীয়তা এবং অ্যানোনিমিটি নিশ্চিত করতে তৈরি হয়েছে।
---
ডার্ক ওয়েবের বৈশিষ্ট্য
1. গোপনীয়তা ও এনক্রিপশন:
ডার্ক ওয়েবের সমস্ত যোগাযোগ এবং কার্যকলাপ এনক্রিপ্টেড, অর্থাৎ ব্যবহারকারীর পরিচয় এবং তথ্য গোপন থাকে।
ব্যবহারকারীরা "অ্যানোনিমাস" থেকে যোগাযোগ করতে পারে।
2. অ্যাক্সেসের সীমাবদ্ধতা:
ডার্ক ওয়েবের ওয়েবসাইটগুলো সাধারণ ".com" বা ".org" ডোমেইনে নয়; এগুলো সাধারণত ".onion" ডোমেইনে থাকে।
এগুলোতে প্রবেশ করতে Tor Browser বা অনুরূপ সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হয়।
3. সাধারণ ইন্টারনেট থেকে ভিন্ন:
ডার্ক ওয়েবের পৃষ্ঠাগুলো সার্চ ইঞ্জিনে ইনডেক্স করা থাকে না।
এর বেশিরভাগ অংশ গোপন পরিষেবা (hidden services) প্রদান করে।
---
ডার্ক ওয়েবের ব্যবহারের উদ্দেশ্য
ডার্ক ওয়েবকে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে বৈধ এবং অবৈধ দুই ধরনের কাজ অন্তর্ভুক্ত।
বৈধ ব্যবহারের উদ্দেশ্য:
1. গোপনীয়তা নিশ্চিত করা:
সাংবাদিক, অ্যাক্টিভিস্ট, বা মানবাধিকার কর্মীরা তাদের কাজের জন্য এটি ব্যবহার করেন যাতে তারা নজরদারির হাত থেকে রক্ষা পান।
2. ব্লকড ওয়েবসাইটে প্রবেশ:
এমন কিছু দেশে, যেখানে ইন্টারনেট সেন্সরশিপ রয়েছে, সেখানে মানুষ ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করে মুক্ত ইন্টারনেট অ্যাক্সেস পেতে পারে।
3. গোপন যোগাযোগ:
ব্যক্তিগত যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।
অবৈধ ব্যবহারের উদ্দেশ্য:
1. বেআইনি বাণিজ্য:
অস্ত্র, মাদক, এবং নকল পাসপোর্ট কেনাবেচার মতো বেআইনি কার্যক্রম ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে ঘটে।
2. সাইবার অপরাধ:
হ্যাকিং পরিষেবা, ডেটা চুরি, এবং র্যানসমওয়্যার হামলার মতো অপরাধমূলক কার্যকলাপ এখানে পরিচালিত হয়।
3. চাইল্ড পর্নোগ্রাফি ও মানব পাচার:
এটি ডার্ক ওয়েবের সবচেয়ে নিন্দনীয় এবং অবৈধ কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম।
---
ডার্ক ওয়েবের গঠন
ডার্ক ওয়েব ইন্টারনেটের ডিপ ওয়েবের একটি অংশ। ইন্টারনেটকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয়:
1. সার্ফেস ওয়েব:
ইন্টারনেটের দৃশ্যমান অংশ, যা সাধারণ সার্চ ইঞ্জিনে পাওয়া যায় (যেমন Google, Bing)।
উদাহরণ: ওয়েবসাইট, ব্লগ, সোশ্যাল মিডিয়া।
2. ডিপ ওয়েব:
ইন্টারনেটের এমন অংশ যা সার্চ ইঞ্জিন দ্বারা ইনডেক্স করা হয় না।
উদাহরণ: ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, মেইল সার্ভিস, প্রাইভেট ডেটাবেস।
3. ডার্ক ওয়েব:
ইন্টারনেটের সবচেয়ে গোপন এবং সীমাবদ্ধ অংশ, যেখানে বিশেষ সফটওয়্যার প্রয়োজন।
---
ঝুঁকি এবং সতর্কতা
ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করা বিপজ্জনক হতে পারে কারণ:
1. সাইবার অপরাধ:
ব্যবহারকারীর ডেটা চুরি বা ডিভাইস হ্যাক হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
2. অবৈধ কার্যকলাপ:
অনেক ক্ষেত্রে, ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করে অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
3. আইনগত জটিলতা:
কোনো বেআইনি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে তা ব্যবহারকারীকে আইনত সমস্যায় ফেলতে পারে।
---
উপসংহার
ডার্ক ওয়েব প্রযুক্তিগতভাবে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যা গোপনীয়তা ও স্বাধীনতার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে, তবে এর অপব্যবহারের কারণে এটি বেশিরভাগ সময় নেতিবাচক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। ডার্ক ওয়েবের প্রকৃতি এবং এর ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে এটি ব্যবহার করার আগে যথেষ্ট সচেতন থাকা প্রয়োজন।