লেবু চাষ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জনপ্রিয়, কারণ এটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি ফল। বাড়ির ছাদ, বারান্দা বা আঙিনায় টবে লেবু চাষ করা যায়। লেবু চাষের জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত:
উপযুক্ত মাটি ও পাত্র নির্বাচন: লেবু চাষের জন্য হালকা দোআঁশ ও অম্লীয় মাটি সর্বোত্তম। টব বা পাত্রের তলায় পানি নিষ্কাশনের জন্য ছিদ্র থাকা আবশ্যক। টবের আকার মাঝারি সাইজের হওয়া উচিত, যাতে গাছের শিকড় পর্যাপ্ত স্থান পায়।
লেবুর জাত বাছাই: বাংলাদেশে বিভিন্ন লেবুর জাত রয়েছে, যেমন:
-
বারি লেবু-১ (এলাচি লেবু): উচ্চ ফলনশীল এবং সুগন্ধি।
-
বারি লেবু-২: সারা বছর ফল দেয় এবং বীজের সংখ্যা কম।
-
বারি লেবু-৩: দেরিতে ফলে, তবে রসের পরিমাণ বেশি।
চারা রোপণ ও পরিচর্যা:
-
রোপণের সময়: মধ্য বৈশাখ থেকে মধ্য আশ্বিন মাস লেবু রোপণের জন্য উপযোগী সময়।
-
সার প্রদান: টবে লেবু চাষের জন্য মাটিতে টিএসপি, পটাশ, চুন ও হাড়ের গুড়া মেশানো উচিত। প্রতিটি টবে প্রায় ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৫০ গ্রাম পটাশ, ১০ গ্রাম চুন এবং ১৫০ গ্রাম হাড়ের গুড়া মেশাতে পারেন। এরপর ১২-১৫ দিন রেখে দিতে হবে। এরপর একটি লেবুর কলমের চারা টবে রোপণ করতে হবে।
-
সার ব্যবস্থাপনা: প্রতিটি গাছে টিএসপি সার ৪০০ গ্রাম, এমওপি সার ৪০০ গ্রাম, ইউরিয়া সার ৫০০ গ্রাম ও গোবর ১৫ কেজি প্রয়োগ করতে হয়। সার তিনভাগে ভাগ করে প্রথম কিস্তি মধ্য ভাদ্র থেকে মধ্য কার্তিক মাসে, দ্বিতীয় কিস্তি মধ্য মাঘ থেকে মধ্য ফাল্গুন মাসে এবং তৃতীয় কিস্তি মধ্য জ্যৈষ্ঠ থেকে মধ্য আষাঢ় মাসে প্রয়োগ করা যায়।
-
সেচ ও আগাছা নিয়ন্ত্রণ: খরা মৌসুমে ২-৩ বার সেচ দিতে হবে। পানি জমে না থাকে এবং মাটির স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। আগাছা নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত পরিচর্যা প্রয়োজন।
পোকামাকড় ও রোগ নিয়ন্ত্রণ:
-
লেবুর প্রজাপতি পোকার আক্রমণ: পাতার কিনারা থেকে খেতে শুরু করে এবং সম্পূর্ণ পাতা খেয়ে ফেলে। আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে ধ্বংস করতে হবে। প্রয়োজনে কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।
-
লেবুর লাল ক্ষুদ্র মাকড়: পাতা ও ফলের সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে, ফলে পাতা হলুদ হয়ে যায়। আক্রান্ত পাতা তুলে ধ্বংস করতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে নির্দিষ্ট কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ: পূর্ণবয়স্ক গাছ থেকে প্রতি বছর ১৪০-১৫০টি লেবু পাওয়া যায়। ফল সংগ্রহের সময় গাছের প্রজাতি ও আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে।
লেবুর ব্যবহার: লেবুতে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও সাইট্রিক অ্যাসিড রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। লেবুর রস মধু, লবণ বা আদার সাথে মিশিয়ে ঠান্ডা ও সর্দি-কাশি উপশমে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও, লেবুর রস রূপচর্চায় এবং ওজন কমাতে সহায়ক।
লেবু চাষে ধৈর্য ও নিয়মিত পরিচর্যা প্রয়োজন। সঠিক পদ্ধতি ও যত্নের মাধ্যমে বাড়িতে লেবু চাষ করে সুস্থ ও সুস্বাদু ফল উপভোগ করা যায়।