পরিবেশবান্ধব কৃষি (Environment-friendly Agriculture) হলো এমন একটি কৃষি পদ্ধতি, যা পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে টেকসই ও দক্ষ কৃষি উৎপাদন নিশ্চিত করে। এই পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের দক্ষতা বৃদ্ধি করা হয় এবং মাটি, পানি, জীববৈচিত্র্য ও বায়ুমণ্ডল সংরক্ষণের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
পরিবেশবান্ধব কৃষির মূল বৈশিষ্ট্য:
-
জৈবিক পদ্ধতির ব্যবহার: রাসায়নিক সার, কীটনাশক বা হরমোনের পরিবর্তে জৈব সার (কম্পোস্ট), বায়োফার্টিলাইজার, এবং জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা।
-
টেকসই ভূমি ব্যবহার: মাটির উর্বরতা রক্ষা এবং ভূমি ক্ষয় রোধের জন্য ফসল আবর্তন, মিশ্র চাষ, এবং শস্যাবৃত্তি (Crop Rotation) পদ্ধতি গ্রহণ।
-
জল সাশ্রয়: সেচ ব্যবস্থায় পানি অপচয় কমিয়ে ড্রিপ সেচ বা স্প্রিঙ্কলার সেচ পদ্ধতি ব্যবহার।
-
উন্নত প্রাকৃতিক কীট নিয়ন্ত্রণ: ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি, যেমন:
-
বন্ধু কীটপতঙ্গের ব্যবহার।
-
প্রাকৃতিক শত্রু পোকামাকড় (যেমন গুবরে পোকা)।
-
কম কার্বন নিঃসরণ: কৃষি প্রক্রিয়ায় জ্বালানি খরচ ও কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন কমিয়ে আনা।
-
বহুবিধ চাষাবাদ: এক জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল ও গাছ চাষ করে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ।
পরিবেশবান্ধব কৃষির উপকারিতা:
-
মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা: রাসায়নিক ব্যবহার এড়িয়ে মাটির পুষ্টি ও জীবাণুগুলোর কার্যক্ষমতা বজায় রাখা।
-
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ: কীটনাশকের ব্যবহার না করার ফলে প্রাকৃতিক শৃঙ্খলা বজায় থাকে।
-
পরিবেশ রক্ষা: জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব কমায় এবং কার্বন শোষণ বাড়ায়।
-
স্বাস্থ্যকর খাদ্য উৎপাদন: রাসায়নিকমুক্ত পদ্ধতিতে উৎপাদিত খাদ্য মানুষের জন্য নিরাপদ।
-
দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সাশ্রয়: রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যয় কমায় কৃষকের আয় বাড়ে।
পরিবেশবান্ধব কৃষি পদ্ধতির উদাহরণ:
-
জৈব চাষাবাদ (Organic Farming): কেবল প্রাকৃতিক উপকরণ ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন।
-
কৃষি বনায়ন (Agroforestry): গাছ ও ফসল একসঙ্গে চাষ করা।
-
জলসংরক্ষণ প্রযুক্তি: যেমন, ধাপ চাষ বা কনট্যুর চাষ।
-
ইন্টিগ্রেটেড ফার্মিং সিস্টেম: পশু পালন, মৎস্য চাষ এবং ফসল চাষের সমন্বয়।
চ্যালেঞ্জ:
-
প্রচলিত কৃষির তুলনায় ফলন কম হতে পারে।
-
পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির জন্য অধিক প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা প্রয়োজন।
-
প্রাথমিক পর্যায়ে কৃষকদের জন্য প্রযুক্তি বা উপকরণ পেতে সমস্যা হতে পারে।
সারসংক্ষেপ:
পরিবেশবান্ধব কৃষি এমন একটি ব্যবস্থা, যা মানুষ, প্রকৃতি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উপকারী। এটি টেকসই উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।