সেচের পানির অভাবে বেশি ফলন নিশ্চিত করার জন্য কিছু কার্যকর পদ্ধতি এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলো ফসলের পানির প্রয়োজন কমিয়ে ফলনের মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে। নিচে এসব পদ্ধতির ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:
১. শুকনো চাষ (Dry Farming):
-
কম বৃষ্টিপাতের এলাকায় বিশেষ ধরনের ফসল চাষের জন্য উপযুক্ত।
-
ফসল বাছাই করতে হবে যেগুলো কম পানি চায়, যেমন বাজরা, যব, ছোলা ইত্যাদি।
২. সেচের আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার:
ড্রিপ ইরিগেশন (Drip Irrigation):
-
গাছের মূলের কাছে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি সরবরাহ করা হয়।
-
পানির অপচয় কম এবং কম পানিতে ভালো ফলন সম্ভব।
মালচিং (Mulching):
-
মাটির ওপর শুকনো খড়, প্লাস্টিক বা জৈব উপাদান বিছিয়ে মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখা হয়।
-
এটি পানির প্রয়োজনীয়তা কমায় এবং আগাছা নিয়ন্ত্রণ করে।
৩. ফসলের জাত নির্বাচন:
-
খরা সহনশীল জাত: এমন ফসল নির্বাচন করতে হবে যেগুলো কম পানি সহ্য করতে পারে।
উদাহরণ: ধানের ক্ষেত্রে খরা সহনশীল জাত যেমন BRRI Dhan 56, BRRI Dhan 71।
-
স্বল্পমেয়াদী জাত: এমন ফসলের জাত বেছে নিতে হবে যেগুলোর জীবনচক্র কম সময়ে শেষ হয়।
৪. পানি সংরক্ষণ পদ্ধতি:
রেনওয়াটার হারভেস্টিং (Rainwater Harvesting):
-
বৃষ্টির পানি জমা করে সেচের কাজে ব্যবহার করা।
পানি পুনর্ব্যবহার:
-
গৃহস্থালির ব্যবহৃত পানি ফিল্টার করে ফসলের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
৫. চাষ পদ্ধতির পরিবর্তন:
এসআরআই পদ্ধতি (System of Rice Intensification):
-
ধানের জন্য ব্যবহৃত এই পদ্ধতিতে চারা কম লাগে এবং পানির প্রয়োজন কম হয়।
রিজ এবং ফারো পদ্ধতি:
-
ফসলের সারির মাঝখানে ফারো তৈরি করে পানি সরবরাহ করা হয়। এতে পানির অপচয় কম হয়।
৬. জৈবিক পদ্ধতি:
-
জৈব সার: মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
-
আগাছা নিয়ন্ত্রণ: আগাছা সরিয়ে ফেললে মাটির আর্দ্রতা নষ্ট হয় না।
৭. মাটির গুণাগুণ উন্নয়ন:
-
কমপ্যাক্ট মাটি এড়ানো: মাটির ভাঙন ও শক্ত জমি হওয়া ঠেকাতে নিয়মিত চাষ করুন।
-
জৈব পদার্থ মেশানো: মাটির জল ধারণক্ষমতা বাড়াতে।
৮. মিশ্র ফসল চাষ (Intercropping):
-
বিভিন্ন ফসল একসঙ্গে চাষ করে পানির ব্যবহার কমানো এবং বেশি ফলন নিশ্চিত করা।
উপসংহার:
সেচের পানির অভাবে আধুনিক প্রযুক্তি, সঠিক চাষ পদ্ধতি এবং খরা সহনশীল জাত ব্যবহার করে ফলন বাড়ানো সম্ভব। এর সঙ্গে পরিবেশবান্ধব উপায়ে মাটির আর্দ্রতা ও পুষ্টি ধরে রাখা হলে কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে।