তাফসির লিখতে মূলত বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, যা কুরআনের ব্যাখ্যা এবং ব্যাখ্যার ধরন অনুযায়ী বিভিন্নভাবে বিভক্ত। নিচে তাফসির লিখতে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতিগুলো তুলে ধরা হলো:
১. তাফসির বিল মাসুর (প্রামাণিক তাফসির)
এটি সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি। এখানে কুরআনের আয়াত ব্যাখ্যার জন্য কুরআনের অন্য আয়াত, হাদিস এবং সাহাবাদের বক্তব্য ব্যবহার করা হয়।
উদাহরণ: তাফসির ইবনে কাসির।
২. তাফসির বিল রাই (বুদ্ধি বা যুক্তি ভিত্তিক তাফসির)
এখানে আয়াত ব্যাখ্যা করতে যুক্তি, বুদ্ধি এবং ভাষাগত বিশ্লেষণ ব্যবহার করা হয়। তবে এটি অবশ্যই কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
উদাহরণ: তাফসির আল-জালালাইন।
৩. তাফসির ইশারী (আধ্যাত্মিক বা মরমি তাফসির)
আধ্যাত্মিক এবং গূঢ় অর্থে কুরআনের আয়াতের ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়। এটি সাধারনত সুফি পণ্ডিতদের মধ্যে প্রচলিত।
উদাহরণ: তাফসির কাশশাফ।
৪. তাফসির লুগাবি (ভাষাগত তাফসির)
এখানে আরবি ব্যাকরণ, শব্দার্থ এবং সাহিত্যিক দিক থেকে কুরআনের আয়াত বিশ্লেষণ করা হয়।
উদাহরণ: তাফসির আল-জামি লি আহকাম আল-কুরআন (ইমাম কুরতুবি)।
৫. তাফসির ইলমি (বৈজ্ঞানিক তাফসির)
বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এবং তথ্য ব্যবহার করে কুরআনের আয়াতের অর্থ ব্যাখ্যা করা হয়।
উদাহরণ: তাফসির আর-রাহমানি ফি তাফসিরুল কুরআন।
৬. তাফসির মওজুয়ি (বিষয়ভিত্তিক তাফসির)
একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর কুরআনের সব আয়াত সংগ্রহ করে তা ব্যাখ্যা করা হয়।
উদাহরণ: কুরআনে নারীর অধিকার বিষয়ক তাফসির।
৭. তাফসির তারতিবি (ক্রমানুসারে তাফসির)
কুরআনের আয়াতগুলো ক্রমানুসারে ব্যাখ্যা করা হয়, সূরা ফাতিহা থেকে শুরু করে সূরা নাস পর্যন্ত।
উদাহরণ: অধিকাংশ তাফসির বই।
৮. তাফসির ফিকহি (আইনগত তাফসির)
এখানে কুরআনের বিধি-বিধান এবং ইসলামী আইন সম্পর্কিত বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা করা হয়।
উদাহরণ: আহকামুল কুরআন (ইমাম শাফেয়ি এবং ইমাম কুরতুবি)।
এই পদ্ধতিগুলো এককভাবে বা সমন্বিতভাবে তাফসির লেখার জন্য ব্যবহৃত হয়। তাফসিরের সঠিকতা নিশ্চিত করার জন্য কুরআন ও সুন্নাহর নির্ভুল অনুসরণ জরুরি।