আমেরিকায় বিশেষ করে পশ্চিমাঞ্চল এবং ক্যালিফোর্নিয়া অঞ্চলে ঘন ঘন দাবানল (wildfires) হওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে প্রাকৃতিক কারণ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানবসৃষ্ট কারণগুলো উল্লেখযোগ্য। নিচে এর প্রধান কারণগুলো আলোচনা করা হলো:
১. শুষ্ক আবহাওয়া ও খরা
-
আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চল প্রায়শই শুষ্ক এবং খরাপ্রবণ।
-
দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে মাটি ও গাছপালা শুকিয়ে যায়, যা দাবানল ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়ায়।
২. তাপমাত্রা বৃদ্ধি (জলবায়ু পরিবর্তন)
-
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে গড় তাপমাত্রা বাড়ছে, যা গাছপালা এবং মৃত ঘাস শুকিয়ে যাওয়ার হার বাড়ায়।
-
উষ্ণ এবং শুষ্ক বাতাস আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করে।
৩. তীব্র বাতাস (Santa Ana Winds)
-
ক্যালিফোর্নিয়া এবং এর আশপাশের এলাকায় "সান্তা আনা বাতাস" নামে পরিচিত শুষ্ক ও তীব্র বাতাস প্রবাহিত হয়।
-
এই বাতাস দাবানল দ্রুত ছড়াতে সহায়তা করে।
৪. বজ্রপাত ও প্রাকৃতিক কারণ
-
শুষ্ক অঞ্চলে বজ্রপাত একটি সাধারণ ঘটনা।
-
বজ্রপাতের কারণে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে, বিশেষত যদি আশেপাশে শুকনো গাছ বা ঘাস থাকে।
৫. মানবসৃষ্ট কারণ
-
অসতর্কভাবে আগুন জ্বালানো, ফেলে দেওয়া সিগারেট, ক্যাম্প ফায়ারের ভুল ব্যবস্থাপনা থেকে দাবানল শুরু হতে পারে।
-
বৈদ্যুতিক লাইন এবং অবকাঠামোগত ত্রুটির কারণে আগুনের সৃষ্টি হওয়া একটি বড় সমস্যা।
৬. বন ব্যবস্থাপনার অভাব
-
কিছু অঞ্চলে মৃত গাছপালা এবং শুকনো ঘাস জমে থাকে। এগুলো ঠিকমতো সরানো বা ব্যবস্থাপনা করা না হলে আগুন দ্রুত ছড়াতে পারে।
৭. জলবায়ুর ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য
-
আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চলের পার্বত্য অঞ্চল এবং বনের প্রকৃতি আগুন ছড়ানোর জন্য উপযুক্ত।
-
ঢালু পাহাড়ের কারণে আগুন খুব দ্রুত উপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে।
৮. শহরের প্রসার (Urban Sprawl)
-
বনাঞ্চল এবং শহরের সীমানা ক্রমশ কাছাকাছি চলে আসছে।
-
ফলে বনাঞ্চলে আগুন লাগলে সেটি সহজেই আবাসিক এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
৯. জ্বালানি সরবরাহ
-
বনাঞ্চলে শুকনো গাছ, পাতার স্তূপ এবং ঘাস প্রচুর পরিমাণে জমে থাকে, যা দাবানলের জন্য প্রাকৃতিক জ্বালানি হিসেবে কাজ করে।
১০. দাবানল প্রাকৃতিক চক্র
-
কিছু অঞ্চলে দাবানল প্রাকৃতিক চক্রের একটি অংশ, যা স্থানীয় উদ্ভিদের পুনর্জন্মে সহায়ক। তবে, এই চক্রটি জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানবিক হস্তক্ষেপের কারণে আরও তীব্র হয়েছে।
ফলাফল এবং ভবিষ্যৎ ঝুঁকি
-
দাবানল পরিবেশগত ক্ষতি, বায়ু দূষণ এবং মানবসম্পদের ধ্বংসের কারণ হয়।
-
জলবায়ু পরিবর্তন এবং অপর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনার কারণে ভবিষ্যতে দাবানলের সংখ্যা এবং তীব্রতা আরও বাড়তে পারে।
দাবানল মোকাবিলা করতে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, উন্নত বন ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি।