মেয়েদের স্তনে ব্যথার (Breast Pain বা Mastalgia) কারণ অনেক রকম হতে পারে। এটি সাধারণত গুরুতর নয়, তবে নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। স্তনে ব্যথা সাধারণত দুই প্রকারে ভাগ করা যায়:
১. চক্রাক্রমিক স্তন ব্যথা (Cyclic Breast Pain)
-
কারণ:
চক্রাক্রমিক ব্যথা মাসিক চক্রের সাথে সম্পর্কিত এবং সাধারণত হরমোনজনিত।
-
এস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা ওঠানামা করে।
-
পিরিয়ড শুরুর কয়েক দিন আগে স্তন ভারী বা ফুলে যাওয়া অনুভূত হয়।
-
লক্ষণ:
-
ব্যথা স্তনের দুই পাশে অনুভূত হয়।
-
স্তন স্পর্শে নরম ও ফোলা থাকে।
-
ব্যথা সাধারণত মাসিক চক্রের পর কমে যায়।
২. অচক্রাক্রমিক স্তন ব্যথা (Non-Cyclic Breast Pain)
-
কারণ:
এটি মাসিক চক্রের সাথে সম্পর্কিত নয় এবং অন্যান্য সমস্যার কারণে হতে পারে।
-
স্তনের টিস্যুতে আঘাত বা ইনফেকশন (যেমন, মাস্টাইটিস)।
-
স্তনের ফাইব্রোডেনোমা বা সিস্ট (অতিরিক্ত টিস্যু বা তরল জমে গঠিত)।
-
পেশী বা রিবের প্রদাহ (যেমন, কস্টোকন্ড্রাইটিস)।
-
অত্যধিক আঁটসাঁট ব্রা বা পোশাক পরা।
-
বড় স্তনের কারণে পেশী টান।
স্তন ব্যথার অন্যান্য সাধারণ কারণ:
-
হরমোনাল পরিবর্তন:
-
গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে স্তনে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
-
মেনোপজের আগে বা পরে হরমোনের ওঠানামার কারণে ব্যথা হতে পারে।
-
ওষুধের প্রভাব:
-
জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল, হরমোন থেরাপি, বা মানসিক চাপের ওষুধ স্তন ব্যথার কারণ হতে পারে।
-
স্তন দুধদান (Breastfeeding):
-
দুধ জমে যাওয়া বা স্তনের ইনফেকশন (মাস্টাইটিস) ব্যথার কারণ হতে পারে।
-
স্তন ক্যান্সার (বিরল ক্ষেত্রে):
-
স্তন ব্যথা সাধারণত স্তন ক্যান্সারের প্রধান লক্ষণ নয়।
-
তবে যদি স্তনে লাম্প, ত্বকে পরিবর্তন, বা নিপল থেকে অস্বাভাবিক স্রাব দেখা যায়, তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
চিকিৎসার জন্য কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন:
-
যদি ব্যথা দীর্ঘ সময় ধরে স্থায়ী হয়।
-
স্তনে শক্ত লাম্প বা গুটি অনুভব হয়।
-
ত্বকের রঙ পরিবর্তন, লালচে ভাব, বা ফোলা দেখা যায়।
-
নিপল থেকে রক্ত বা অস্বাভাবিক তরল বের হয়।
-
ব্যথা জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব ফেলে।
সাধারণ সমাধান:
-
পোশাক পরিবর্তন: সঠিক মাপের ব্রা ব্যবহার করুন।
-
ব্যথানাশক ওষুধ: প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন।
-
গরম সেঁক: গরম কাপড় দিয়ে স্তনে সেঁক দিলে আরাম পাওয়া যায়।
-
হরমোন নিয়ন্ত্রণ: ডাক্তারের পরামর্শে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা হরমোন থেরাপি বদল করা।
-
পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও পুষ্টি: শারীরিক স্ট্রেস কমানো এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ।
উপসংহার:
স্তনে ব্যথা সাধারণত স্বাভাবিক এবং স্বল্পমেয়াদি। তবে যদি এটি দীর্ঘস্থায়ী বা অস্বাভাবিক হয়, তখন চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা জরুরি। স্তনের স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে নিয়মিত চেকআপ এবং স্ব-পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।