সিসমোগ্রাফ একটি যন্ত্র যা পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া ভূকম্প (earthquake) বা তীব্র কম্পন (seismic waves) পরিমাপ এবং রেকর্ড করে। এটি মূলত ভূকম্পন বা ভূমিকম্পের তীব্রতা এবং অবস্থান নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হয়। সিসমোগ্রাফ কীভাবে কাজ করে, তা নিচে ব্যাখ্যা করা হলো:
১. সিসমোগ্রাফের মূল উপাদান:
সেন্সর (Seismic Sensor): এটি ভূকম্পন বা কম্পনের তরঙ্গ (seismic waves) সনাক্ত করে।
ওজন (Mass): সিসমোগ্রাফে একটি ভারী ওজন থাকে, যা একটি স্প্রিংয়ের সাথে সংযুক্ত থাকে। এটি কম্পনের সময় স্থির থাকে, এবং মাটির কম্পন তার অবস্থান পরিবর্তন করে।
গ্রাফ পেপার/ডিজিটাল স্ক্রীন: সিসমোগ্রাফের কাজকৃত কম্পন সেগুলোর প্রভাব একটি গ্রাফের আকারে রেকর্ড করা হয়। সিসমোগ্রাফের কারণে কম্পনের তথ্য গ্রাফে দেখা যায়, যা কম্পনের শক্তি ও বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
২. সিসমোগ্রাফের কাজের প্রক্রিয়া:
1. ভূকম্পন শুরু হলে: ভূকম্পন বা কম্পন যখন পৃথিবীর ভেতরে ঘটে, তখন সেই কম্পন সিসমোগ্রাফের সেন্সরের কাছে পৌঁছায়। এই কম্পন বিভিন্ন ধরনের তরঙ্গের মাধ্যমে ছড়ায়—যেমন P-তরঙ্গ (প্রাইমারি বা কম্পন প্রথমে পৌঁছানো তরঙ্গ) এবং S-তরঙ্গ (সেকেন্ডারি বা দেরিতে পৌঁছানো তরঙ্গ)।
2. ওজনের প্রতিক্রিয়া: সিসমোগ্রাফের ভিতরে একটি ভারী ওজন (বা স্থিতিশীল ম্যাস) একটি স্প্রিংয়ের সাথে সংযুক্ত থাকে। যখন মাটি কম্পন করে, তখন সেই কম্পন ওজনের স্থিতিস্থাপকতা বাধাগ্রস্ত করে এবং ওজনটি স্থির অবস্থান থেকে স্থানান্তরিত হয়।
3. কম্পনের রেকর্ডিং: সিসমোগ্রাফের অন্য অংশটি এই স্থানান্তরিত ওজনের মুভমেন্টকে রেকর্ড করে। একে সাধারণত একটি গ্রাফে প্রিন্ট করা হয়, যা সিসমোগ্রাম নামে পরিচিত।
৩. সিসমোগ্রাম:
সিসমোগ্রাফের রেকর্ড করা কম্পনের ডেটা সিসমোগ্রাম নামে পরিচিত। এটি একটি গ্রাফ যা ভূকম্পনের প্রথম (P-তরঙ্গ), দ্বিতীয় (S-তরঙ্গ) এবং পরবর্তীতে আসা (রেইলি ও লভ তরঙ্গ) বিভিন্ন তরঙ্গের সময়কাল, তীব্রতা এবং বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। সিসমোগ্রাম থেকে বিশ্লেষণ করা হয়:
ভূকম্পনের উৎসের (এপিসেন্টার) দূরত্ব
কম্পনের শক্তি (ম্যাগনিচিউড)
কম্পনের ধরন
এভাবে সিসমোগ্রাফ ভূমিকম্পের সঠিক তথ্য রেকর্ড করে, যা ভূ-তাত্ত্বিক ও সিসমোলজিস্টদের ভূকম্পনের প্রকৃতি এবং
শক্তি বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করে।