মানুষ কেন বিয়ে করে, এর উত্তর একাধিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেওয়া যায়, কারণ বিয়ের উদ্দেশ্য বা কারণ ব্যক্তিগত, সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং ঐতিহাসিক বিভিন্ন মাত্রা জড়িয়ে থাকে। সাধারণভাবে, মানুষের বিয়ের কিছু প্রধান কারণ হলো:
১. ভালোবাসা ও আবেগের সম্পর্ক
-
অনেক মানুষ বিয়ে করে ভালোবাসার জন্য। প্রেম, আবেগ ও একে অপরের প্রতি মমত্ববোধ থেকে মানুষের মধ্যে গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়, যা বিয়েতে রূপ নেয়। দুটি মানুষ যখন একে অপরকে গভীরভাবে বুঝে ও সম্মান করে, তখন তারা বিয়ের মাধ্যমে একে অপরের জীবনে একসাথে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।
২. পারস্পরিক সহায়তা ও সঙ্গী জীবন
-
বিয়ে মানুষের জীবনসঙ্গী হওয়ার সুযোগ প্রদান করে, যারা একে অপরকে মানসিক, শারীরিক এবং আর্থিকভাবে সমর্থন দিতে পারে। বিয়ে করে দুটি ব্যক্তি একে অপরের জীবনসঙ্গী হয়ে থাকেন, এবং একে অপরের বিপদে-আপদে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। বিয়ে একজনের জন্য নিরাপত্তা এবং সমর্থনও এনে দেয়।
৩. প্রজনন ও পারিবারিক উদ্দেশ্য
-
অনেকের জন্য বিয়ে করা জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে সন্তান জন্মদানের উদ্দেশ্যে। বিয়ের মাধ্যমে, একজন পুরুষ এবং একজন নারী সন্তান ধারণ করতে এবং পরিবারের অঙ্গ হতে পারে। অনেক সমাজে সন্তান জন্মদান এবং তাদের সঠিকভাবে লালন-পালন করা বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য।
৪. সামাজিক মর্যাদা ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ
-
অনেক সমাজে বিয়ে একটি সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রথা হিসেবে দেখা হয়। বিয়ে করা ঐতিহ্যগতভাবে মানুষের জীবনযাত্রার একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়ায়, যেখানে বিয়ে করা সামাজিক সম্মান এবং মর্যাদার প্রতীক হতে পারে। বিশেষ করে কিছু সমাজে একক জীবনযাপন বা অবিবাহিত থাকা সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
৫. আইনগত ও আর্থিক সুবিধা
-
বিয়ের মাধ্যমে মানুষের আইনি অধিকার ও সুবিধা যেমন স্বামীর বা স্ত্রীর স্বাস্থ্য বীমা, পেনশন সুবিধা, বা সম্পত্তির মালিকানা ভাগাভাগি নিশ্চিত হয়। এই আইনি সুরক্ষাগুলো অনেক দম্পতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, বিশেষ করে যখন তারা একসাথে জীবনযাপন শুরু করতে চায়।
৬. মানসিক শান্তি ও নিরাপত্তা
-
অনেক মানুষ বিয়েকে জীবনযাত্রায় স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা আনার এক উপায় হিসেবে দেখে। একসাথে থাকা এবং একজন সঙ্গীর সাথে জীবন কাটানোর মাধ্যমে অনেকেই মানসিক শান্তি ও নিরাপত্তা অনুভব করে, বিশেষ করে জীবনের কঠিন সময়ে।
৭. সহজে সমাজে মিশতে পারা
-
কিছু মানুষ বিয়ে করে কারণ তারা জানে যে এটি সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য এবং তাদের জীবনকে আরও সহজ করে দেয়। বিয়ের মাধ্যমে, একত্রিত হয়ে পরিবার ও বন্ধুদের সামনে সম্পর্কের দৃঢ়তা এবং প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করা হয়, যা সমাজে একে অপরকে কাছাকাছি নিয়ে আসে।
৮. সামাজিক বা পারিবারিক চাপ
-
কখনও কখনও, পারিবারিক বা সামাজিক চাপের কারণে মানুষ বিয়ে করতে বাধ্য হয়। অনেক পরিবার বা সমাজে বিয়ের জন্য সময়সীমা বা প্রত্যাশা থাকতে পারে, যার ফলে কিছু মানুষ অন্যদের সন্তুষ্ট করতে বা সামাজিক মর্যাদা বজায় রাখতে বিয়ে করেন।
৯. নতুন অভিজ্ঞতা এবং জীবনধারা
-
বিয়ের মাধ্যমে নতুন জীবন শুরু করার একটি আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে। এটি জীবনের নতুন অধ্যায়, নতুন অভিজ্ঞতা, এবং একে অপরের সাথে শেয়ার করার একটি নতুন সুযোগ হতে পারে। বিয়ের মাধ্যমে, অনেকেই নতুন ধরনের সম্পর্ক, দায়িত্ব ও জীবনধারা অনুসরণ করার সুযোগ পান।
১০. আধ্যাত্মিক বা ধর্মীয় বিশ্বাস
-
অনেক মানুষ বিয়ে করে ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক কারণে। ধর্মে বিয়েকে একটি পবিত্র প্রথা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যেখানে দুটি মানুষ একে অপরকে জীবনের উদ্দেশ্য ও আল্লাহ/ঈশ্বরের প্রতি কর্তব্য পালনে সাহায্য করতে পারে। কিছু ধর্মে বিয়েকে একটি জরুরি দায়িত্ব এবং আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতার অংশ হিসেবে দেখা হয়।
১১. শারীরিক সম্পর্ক
-
কিছু মানুষ শারীরিক বা যৌন সম্পর্কের কারণে বিয়ে করে, কারণ তারা বিশ্বাস করে যে বিয়ের মাধ্যমে যৌন সম্পর্ক একটি সামাজিক এবং আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়া হয়ে ওঠে। তবে, এই কারণটি আধুনিক সমাজে অনেকাংশে কমে আসছে, যেখানে সম্পর্কের অন্যান্য দিকগুলোও গুরুত্ব পাচ্ছে।