বাংলাদেশে চেক ডিজঅনারের নোটিশ দেয়ার পদ্ধতি, মামলা দায়ের সময় এবং কোন কোর্ট মামলা আমলে নিতে পারে তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল:
১. নোটিশ দেয়ার পদ্ধতি:
বাংলাদেশে চেক ডিজঅনারের পর, চেক প্রদানকারীকে নোটিশ প্রদান করা আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক। নোটিশ দেয়ার পদ্ধতি নিম্নরূপ:
-
নোটিশের সময়সীমা: চেক ডিজঅনারের পর, চেক প্রদানকারীকে ৩১ দিনের মধ্যে (চেক ডিজঅনারের তারিখ থেকে) একটি লিখিত নোটিশ প্রদান করতে হবে।
-
নোটিশের ধরন: নোটিশটি সাধারণত লিখিত হবে, এবং এটি রেজিস্টারড পোস্ট বা কুরিয়ার সিস্টেম ব্যবহার করে চেক প্রদানকারীকে পাঠাতে হবে।
-
নোটিশের বিষয়বস্তু: নোটিশে অবশ্যই নিম্নলিখিত তথ্য থাকতে হবে:
-
চেক নম্বর
-
চেকের পরিমাণ
-
চেক ডিজঅনার হওয়ার তারিখ
-
চেক প্রদানকারীকে তার দায়-দায়িত্ব সম্পর্কে অবহিত করা এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধের জন্য আহ্বান জানানো।
যদি চেক প্রদানকারী ৩১ দিনের মধ্যে নোটিশের পরিমাণ পরিশোধ না করেন, তবে আপনি মামলা দায়ের করতে পারেন।
২. মামলা দায়েরের সময়সীমা:
-
৪৫ দিনের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে: চেক ডিজঅনারের পর, যদি চেক প্রদানকারী ৩১ দিনের মধ্যে পাওনা পরিশোধ না করেন, তাহলে চেক প্রাপক (যিনি চেক পেয়েছেন) ৪৫ দিনের মধ্যে মামলা দায়ের করতে পারেন। এই সময়সীমা নোটিশ প্রাপ্তির তারিখ থেকে গণনা করা হয়।
-
উদাহরণস্বরূপ, যদি চেক ডিজঅনারের তারিখ ১ জানুয়ারি এবং নোটিশ প্রাপ্তির তারিখ ৫ জানুয়ারি হয়, তাহলে ৩১ দিন পরে অর্থাৎ ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চেক প্রদানকারীকে চূড়ান্তভাবে পরিশোধের জন্য নোটিশ পাঠাতে হবে। এরপর ৪৫ দিনের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে, অর্থাৎ সর্বোচ্চ ২০ মার্চ এর মধ্যে মামলা দায়ের করা যাবে।
৩. কোন কোর্ট মামলা আমলে নিতে পারে?:
চেক ডিজঅনারের মামলা ক্রিমিনাল কেস হিসেবে গণ্য হয় এবং এটি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে দায়ের করা হয়। নিম্নলিখিত কোর্টগুলি এই ধরনের মামলা আমলে নিতে পারে:
-
ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট:
-
চেক ডিজঅনারের মামলা সাধারণত ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট এ দায়ের করা হয়, কারণ এটি একটি অপরাধমূলক মামলা।
-
সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সাধারণত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট অথবা ক্যাশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট এ মামলা দায়ের করা হয়।
-
জেলার বিভিন্ন এলাকাগুলিতে সাধারণত দ্বিতীয় শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট এ মামলা দায়ের হয়।
-
দণ্ডাদেশ:
-
যে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলা দায়ের হবে, সেই কোর্টে শাস্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে।
-
যদি চেক প্রদানকারী দোষী সাব্যস্ত হন, তবে তাকে শাস্তি দেয়া হবে যা হতে পারে যে কোনো একটি শাস্তি:
-
কারাদণ্ড (১ থেকে ৩ বছরের মধ্যে)
-
অর্থদণ্ড (চেকের পরিমাণের দ্বিগুণ পর্যন্ত অর্থদণ্ড)
তবে, মামলার ক্ষেত্রে অন্য কোর্টে বিচার পেতে পারেন যদি স্থানান্তর করা হয়।
৪. শাস্তি:
চেক ডিজঅনারের জন্য Negotiable Instruments Act, 1881 অনুসারে শাস্তি হল:
-
কারাদণ্ড: সর্বনিম্ন ১ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৩ বছর পর্যন্ত।
-
অর্থদণ্ড: চেকের পরিমাণের দ্বিগুণ অর্থদণ্ড হতে পারে।
এছাড়া, আদালত চেক প্রদানকারীকে সাজার পাশাপাশি ক্ষতিপূরণও আদায় করতে পারে।
সারাংশ:
-
নোটিশ দেয়ার সময়সীমা: চেক ডিজঅনার হওয়ার পর ৩১ দিনের মধ্যে নোটিশ দিতে হবে।
-
মামলা দায়েরের সময়সীমা: নোটিশ পাওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে।
-
মামলা আমলে নেবার কোর্ট: মামলাটি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট এ দায়ের হবে।