সুরা আস-সাফফাত (سورة الصافات)-এর শানে নুযূল বা অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপট নিয়ে ইসলামী স্কলারদের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাখ্যা রয়েছে। এটি মক্কায় অবতীর্ণ একটি মক্কী সূরা। এই সূরার শানে নুযূল বোঝার জন্য কিছু মূল বিষয় উল্লেখ করা হলো:
সুরা আস-সাফফাতের শানে নুযূল:
-
তাওহীদের প্রচার ও শিরকের বিরোধিতা:
সুরাটি অবতীর্ণ হয়েছিল মক্কার মুশরিকদের শিরক এবং ভ্রান্ত ধারণা খণ্ডন করার জন্য। মক্কার মুশরিকরা ফেরেশতাদের আল্লাহর কন্যা বলে বিশ্বাস করত এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর উপাসনা করত। সুরাটি তাদের এই বিশ্বাস খণ্ডন করে এবং একমাত্র আল্লাহর প্রতি ইমান আনার আহ্বান জানায়।
-
প্রাচীন নবীদের ঘটনা উল্লেখ:
সুরাটিতে ইবরাহিম (আ.), নূহ (আ.), মুসা (আ.), এবং ইউনুস (আ.)-এর ঘটনাগুলো উল্লেখ করে তাদের ধৈর্য, তাওহীদ প্রচার, এবং পরীক্ষার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এটি মক্কার মুশরিকদের বোঝানোর জন্য ছিল যে, সত্যের পথে যারা ছিল, তারা সবসময় পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন এবং পরবর্তীতে সফল হয়েছেন।
-
পরকালের ধারণা:
মক্কার মুশরিকরা পরকাল বা আখিরাতকে অস্বীকার করত। সুরা আস-সাফফাত অবতীর্ণ হয় তাদেরকে জান্নাত এবং জাহান্নামের ধারণা স্পষ্টভাবে বোঝানোর জন্য। এতে আল্লাহর আদেশ মান্যকারীদের জন্য পুরস্কার এবং অমান্যকারীদের জন্য শাস্তির বর্ণনা রয়েছে।
-
বিশ্বাসীদের সাহস দেওয়া:
সুরাটি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সাহাবিদের এবং মুসলিমদের ধৈর্য ধরার উৎসাহ দেয়। এতে তাদের জানানো হয় যে, সত্যের পথে তারা একা নয়; পূর্ববর্তী নবী ও তাদের অনুসারীরাও এই পথে কষ্ট সয়েছেন এবং পরিশেষে সফল হয়েছেন।
মূল বার্তা:
সুরা আস-সাফফাত আল্লাহর একত্ববাদ প্রতিষ্ঠার জন্য এবং শিরক ও ভ্রান্ত বিশ্বাসের বিরুদ্ধে হেদায়েতের একটি শক্তিশালী বার্তা দেয়। এটি মুসলিমদের আখিরাতে বিশ্বাস দৃঢ় করতে এবং ধৈর্যশীল হতে উৎসাহিত করে।
উপসংহার:
সুরা আস-সাফফাতের শানে নুযূলের মূল প্রেক্ষাপট হলো মক্কার মুশরিকদের শিরকের বিরুদ্ধে আল্লাহর একত্বের বার্তা দেওয়া এবং পরকালের ধারণা প্রতিষ্ঠা করা। এটি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সময়ের মুসলিমদের ধৈর্য ও সাহস জোগানোর জন্যও ছিল।