শালবন বিহার বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার ময়নামতিতে অবস্থিত একটি প্রাচীন বৌদ্ধবিহার। এটি বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের অন্যতম প্রধান নিদর্শন এবং প্রাচীন বাংলার বৌদ্ধ সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।
শালবন বিহারের সংক্ষিপ্ত বিবরণ:
-
অবস্থান: শালবন বিহার কুমিল্লা শহরের প্রায় ৮ কিলোমিটার উত্তরে ময়নামতি পাহাড়ি এলাকার মাঝখানে অবস্থিত।
-
প্রতিষ্ঠা: ধারণা করা হয়, এটি সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে পাল বংশের শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল। বিহারটি দেববংশীয় রাজা শ্রীভবদেব কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয় বলে উল্লেখ পাওয়া যায়।
-
নামকরন: আশপাশের এলাকায় একসময় শালগাছের বন ছিল। সেখান থেকেই এর নাম হয় "শালবন বিহার।"
শালবন বিহারের স্থাপত্য:
-
বিহার প্রাঙ্গণ:
-
বিহারটি একটি আয়তাকার কাঠামো। এর চারপাশে ১১৫টি কক্ষ রয়েছে, যেগুলো বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বসবাসের জন্য ব্যবহৃত হতো।
-
কেন্দ্রীয় অংশে একটি বড় বৌদ্ধ স্তূপ রয়েছে। এটি মূল প্রার্থনা বা ধ্যানের স্থান ছিল।
-
নকশা ও পরিকল্পনা:
-
পুরো বিহারটি উত্তর-দক্ষিণে প্রসারিত এবং চারদিকটি প্রাচীর দিয়ে ঘেরা।
-
স্তূপটির চারপাশে অঙ্গন রয়েছে, যা প্রতিদিনের ধর্মীয় কার্যক্রমের জন্য ব্যবহৃত হতো।
-
মাটি ও ইটের কাজ:
-
বিহারটি নির্মাণে পোড়া ইট ও মাটি ব্যবহার করা হয়েছে। এর দেয়ালের নকশা ও ইটের স্থাপত্য পাল যুগের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে।
উদ্ঘাটন এবং প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা:
-
শালবন বিহার আবিষ্কার করা হয় ১৯৫৫ সালে। এর খননকাজ পরিচালনা করেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা।
-
খননে বিভিন্ন মুদ্রা, মৃৎপাত্র, পোড়ামাটির ফলক, ব্রোঞ্জের মূর্তি, সিলমোহর ইত্যাদি পাওয়া গেছে। এগুলো পাল যুগের বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও শিল্পের চিহ্ন বহন করে।
ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব:
-
শালবন বিহার ছিল প্রাচীন বাংলার বৌদ্ধধর্মের শিক্ষাকেন্দ্র। এখানে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা শিক্ষা এবং ধর্মীয় আচার পালন করতেন।
-
এটি তৎকালীন সময়ে শিক্ষা, ধ্যান, এবং ধর্ম প্রচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল।
বর্তমান অবস্থা:
-
বর্তমানে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে।
-
শালবন বিহার এলাকাটি এখন ময়নামতি জাদুঘরের অংশ, যেখানে আবিষ্কৃত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো সংরক্ষিত রয়েছে।
শালবন বিহার ইতিহাস ও স্থাপত্যকর্মের জন্য শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীন বৌদ্ধ সভ্যতার একটি অনন্য নিদর্শন। এটি দেখতে প্রতিদিন দেশি-বিদেশি বহু পর্যটক আসেন।