চক দিয়ে বোর্ডে লেখার সময় যে শব্দ হয় এবং তা শুনে অনেকের গা শিউরে ওঠে, এর কারণ আমাদের শরীর ও মনের বিশেষ ধরনের প্রতিক্রিয়া। এটি একটি জৈবিক, মানসিক এবং স্নায়বিক বিষয়, যা নিচে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা হলো:
১. শব্দের ফ্রিকোয়েন্সি এবং তীব্রতা
-
চক দিয়ে বোর্ডে লেখার সময় শব্দটি উচ্চতর ফ্রিকোয়েন্সির (২০০০–৫০০০ হার্টজ) হয়, যা মানুষের কানের জন্য খুব সংবেদনশীল।
-
এই ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ আমাদের শ্রবণযন্ত্রে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে এবং অস্বস্তি তৈরি করে।
২. প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া
-
মানুষের শরীর কিছু ধরনের তীক্ষ্ণ বা অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দকে "বিপদ সংকেত" হিসেবে ব্যাখ্যা করে।
-
আদিম যুগে আমাদের পূর্বপুরুষদের জন্য এ ধরনের শব্দ হুমকির ইঙ্গিত হতে পারত (যেমন, শিকারি প্রাণীর শব্দ)।
-
এর ফলে শরীরে স্বয়ংক্রিয় প্রতিরক্ষা প্রতিক্রিয়া শুরু হয়, যার ফলে গা শিউরে ওঠে।
৩. স্নায়ুতন্ত্রের ভূমিকা
-
অ্যামিগডালা (Amygdala): মস্তিষ্কের এই অংশ আবেগ এবং ভয় নিয়ন্ত্রণ করে।
-
তীক্ষ্ণ বা বিরক্তিকর শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গে অ্যামিগডালা সক্রিয় হয়ে ওঠে, যা শরীরে অস্বস্তি ও শারীরিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।
৪. ঘর্ষণ শব্দের প্রভাব (Friction Noise Effect)
-
চক বা নখ দিয়ে বোর্ডে লেখার সময় শব্দটি ঘর্ষণের কারণে হয়।
-
এই শব্দটি ডিসকর্ড্যান্ট নোটস (Discordant Notes) তৈরি করে, যা কানে অপ্রত্যাশিত এবং অস্বস্তিকর শোনায়।
৫. মানসিক সংবেদনশীলতা
-
অনেকের কাছে এই শব্দটি সরাসরি বিরক্তিকর এবং ভয়ানক মনে হয়।
-
এতে তাদের মস্তিষ্ক শব্দটি আরও নেতিবাচকভাবে প্রক্রিয়াকরণ করে, যার ফলে গা শিউরে ওঠে।
৬. শারীরিক প্রতিক্রিয়া: গা শিউরে ওঠা
-
শব্দ শুনে আমাদের সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র সক্রিয় হয়।
-
শরীর দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানায়, যেমন পেশি সংকুচিত হওয়া এবং লোম দাঁড়িয়ে যাওয়া।
৭. সামাজিক ও অভ্যাসগত প্রভাব
-
ছোটবেলা থেকে আমরা শুনে আসি যে এই শব্দ বিরক্তিকর বা "খারাপ।"
-
সামাজিক এই ধারণা আমাদের মনে এমন প্রতিক্রিয়া আরও তীব্র করে তোলে।
সংক্ষেপে:
চক দিয়ে বোর্ডে লেখার শব্দ উচ্চতর ফ্রিকোয়েন্সি, স্নায়ুতন্ত্রের প্রতিক্রিয়া, এবং আমাদের মানসিক সংবেদনশীলতার কারণে গা শিউরে ওঠার মতো প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। এটি একটি প্রাকৃতিক এবং জৈবিক প্রতিক্রিয়া, যা অস্বস্তিকর শব্দের প্রতি আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে।