সূর্যের ব্যাস চাঁদের ব্যাসের প্রায় চারশ’ গুণ এবং সূর্যের দূরত্বও পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্বের প্রায় চারশ’ গুণ। ফলে পৃথিবী থেকে চাঁদকে প্রায় সূর্যের সমানই দেখায়। কৌণিক ব্যাস আধা ডিগ্রি। কিন্তু পৃথিবীর সূর্য প্রদক্ষিণ পথ এবং চাঁদের পৃথিবী প্রদক্ষিণ পথ ডিম্বাকৃতি হওয়ায় পৃথিবী থেকে সূর্য ও চাঁদের দূরত্ব সব সময় এক থাকে না। ফলে পৃথিবী থেকে এদের আকারও তুলনামূলকভাবে সামান্য ছোট বড় দেখায়।
পৃথিবী একটি উপবৃত্তাকার পথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। চাঁদ আবার একইভাবে প্রদক্ষিণ করে পৃথিবীকে। সূর্য মহাকাশে একটি বিস্তৃত আলোক উৎস। পৃথিবী ও চাঁদ আলোকহীন অস্বচ্ছ পদার্থ। ফলে এদের যে পাশে সূর্য থাকে তার বিপরীত পাশে ছায়ার সৃষ্টি হয়। কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে সরলরেখায় এলে পৃথিবী ও চাঁদের একের ছায়া অন্যটির উপর পড়ে।
পৃথিবীর ছায়া চাঁদের উপর পড়লে চন্দ্রগ্রহণের সৃষ্টি হয়। আর চাঁদের ছায়া পৃথিবীতে পড়লে ঐ ছায়ার অন্তর্গত স্থানে সূর্যগ্রহণের সৃষ্টি হয়। গ্রহণ হতে হলে সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদকে একই সরলরেখায় আসতে হয়।
চাঁদের কক্ষপথ এবং পৃথিবীর কক্ষপথ দুটি যদি একই তলে থাকতো তাহলে সাধারণ হিসেবে প্রতি পূর্ণিমাতে চন্দ্রগ্রহণ এবং প্রতি অমাবস্যায় সূর্যগ্রহণ হওয়ার কথা। সূর্য ও পৃথিবী উভয়ে একই তল, পৃথিবীর কক্ষতল বা ক্রান্তিবৃত্তের তলে অবস্থিত।
কিন্তু চাঁদের কক্ষতল এই তলের সঙ্গে ৫ ডিগ্রী কোণে হেলে থাকে। কাজেই চাঁদের কক্ষতলের অর্ধেক পৃথিবীর কক্ষতলের ওপরে এবং বাকি অর্ধেক পৃথিবীর কক্ষতলের নিচে থাকে। আপন কক্ষপথে পৃথিবী প্রদক্ষিণকালে যে দুই দিন চাঁদ দুই পাতাবিন্দুতে (চাঁদের কক্ষপথ যে দুটি বিন্দুতে ক্রান্তিবৃত্তকে ছেদ করে) পৃথিবীর কক্ষতল ভেদ করে, মাত্র সেই দুটি দিনই চাঁদ, পৃথিবী ও সূর্য একই তলে অবস্থান করে। কিন্তু, গ্রহণ হতে গেলে এই তিনটিকে একই সমতলে থাকার পাশাপাশি এক সরলরেখাতেও আসতে হবে। চাঁদ এই দুই পাতবিন্দুর কোনো একটিতে বা তার কাছে থাকা অবস্থায় যদি অমাবস্যা বা পূর্ণিমা হয় কেবলমাত্র তখনই সূর্য, চাঁদ ও পৃথিবী একই সরলরেখায় এসে গ্রহণ ঘটায়।