ভারত উপমহাদেশে আদিকাল থেকেই টিপ পরার বিষয়টি প্রচলিত ছিল। কপালের টিপ যে কেবল সৌন্দর্যের প্রতীক তা নয়, এটা বিজয় বা গৌরবেরও প্রতীক। প্রাচীন রাজ-রাজড়াগণ তাদের রাজবংশের প্রতীক হিসেবে বিশেষ ধরনের টিকা পরত। কপালের টিপ বা টিকা দেখেই বোঝা যেত ঐ ব্যক্তি কোন রাজপরিবারের বা রাজ্যের মালিক বা উত্তরাধিকার।
জাতীয় কবি কাজী নজরুলের কালজয়ী কবিতা ‘বিদ্রোহীর’ প্রথম স্তবকেই পাঠক পাবেন– ‘মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!’। অন্য দিকে বাংলা-ভারত ভূখণ্ডের মাটির নিচে যে সব পুরাকীর্তির মূর্তি পাওয়া গেছে তাদের অনেকগুলোর কপালেই টিপ পরানো ছিল। এর অর্থ হচ্ছে কপালের টিপ পুরোমাত্রায় একটি বঙ্গভারতীয় রীতি, সংস্কৃতি বা প্রতীক (Symbol)। এর সাথে মধ্য প্রাচ্যের বা আরবের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।
এখন অনেকে বলবেন, মধ্য প্রাচ্যের এই প্রথা ইসলামের আবির্ভাবের সাথে সাথে বিলুপ্ত হয়েছে। তাই এটা পাচার হয়ে এসেছে ভারত ভূখণ্ডে। কিন্তু ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বের পুরাকীর্তিতে যখন টিপ বা টিকা পরানোর আলামত আছে, তার ব্যাখ্যা কী?
খ্রিস্ট জন্মের পূর্বে আলেকজান্ডারের ভারত দখলের ইতিহাস আছে। কিন্তু আরবগণ অষ্টম শতকের(৭১২ সাল) এর পূর্বে ভারত বা ভারতের কোন অংশ দখল করেছিল এমন কোন ইতিহাস নেই। তাই আরবীয় নষ্টা নারীদের কপালের টিপ ভারতে, বিশেষত বাংলায় আসার কোন কারণই নেই। তাই নমরুদের ঘটনার সাথে বঙ্গভারতীয় নারীদের কপালের টিপ পরার অনুসঙ্গ টেনে আনা ভ্রান্ত বিশ্বাস বা পুরাকাহিনীর নব আবিষ্কার হতে পারে, ঐতিহাসিক ঘটনা হতে পারে না। মেয়েদের অলঙ্কার পরার যারা বিরোধিতা করেন, তারা কোন প্রকার মিথ্যা ঘটনা না সাজিয়েই তা করতে পারেন। কিন্তু কেউ যখন ইহুদি সূত্র থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বাঙালি নারীদের সৌন্দর্যচর্চার বিরোধিতায় নামেন, তাদের কি নামে অবহিত করব?